ইসরায়েলকে যুদ্ধে না জড়ানোর আহ্বান পশ্চিমা বন্ধুদের

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৫ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
ইরানের হামলার পর পশ্চিমা মিত্ররা ব্যাপক তৎপর হতে শুরু করে। শনিবার হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইরান-ইসরায়েলের হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে আরও একটি যুদ্ধের আশঙ্কা। এরইমধ্যে ইরানের হামলার ফিরতি জবাবে নেতানিয়াহুকে পাল্টা হামলার সম্মতি দিয়েছে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা। যদিও তার দিনক্ষণ ও মাত্রা ঠিক হয়নি এখনো।

তবে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপে যদি পাল্টা হামলা হয় তাহলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গী হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

জি সেভেনসহ (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র; সাত দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা জোট) পশ্চিমা মিত্ররা এবং চীন-রাশিয়াও যুদ্ধ এড়াতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা ইসরায়েলকে যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে ইইউর সুসম্পর্ক রাখা উচিত।

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, তারা বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে চায়। প্রশাসনের শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানেও একই বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট খবর: ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে ‘একমত’ ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা

আরও পড়ুন: ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র, উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান যুক্তরাজ্যের

ওয়াশিংটন এবং তেহরানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাক সত্ত্বেও ইসরায়েলে ইরানের হামলার আগে ‘সুইস চ্যানেলের’ মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করেছিল উল্লেখ করে দেশটির শীর্ষ কর্তাদের বরাতে গার্ডিয়ান ও বিবিসি জানায়, ইরান যখন ইসরায়েলে হামলা করে তখন উত্তেজনার মধ্যেই নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন জো বাইডেন।

বাইডেন ইসরায়েলকে যে কোনো পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছেন। সাবধানে এবং কৌশলীভাবে চিন্তা করতে বলেছেন। সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানে ফের হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্রে এতে যোগ দেবে না।

এদিনে জি সেভেন জোটের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও ইসরায়েলকে যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এড়াতে ফ্রান্স সব কিছু করবে। ইসরায়েলের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের পাশে থাকতে হবে, তবে যুদ্ধ বৃদ্ধি এড়াতে হবে।’

চীন সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ সাংহাইয়ে বলেছেন, ‘তিনি ইরানকে ইসরায়েলের ওপর আর আক্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেছেন, তবে ইসরায়েলি সরকারকেও উত্তেজনা কমাতে অবদান রাখতে হবে।’

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘ইসরাইল ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ইতোমধ্যে আত্মরক্ষামূলকভাবে জিতেছে এবং এই অঞ্চলে আর উত্তেজনা বাড়াতে হবে না। ’

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘তিনি মনে করেন ইসরায়েল ইরানকে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ‘পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত’- তবে দেশটিকে সতর্ক থাকার এবং হৃদয় নয়, মাথা দিয়ে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’

তেহরানের হামলাকে ইরানের ‘দ্বৈত পরাজয়’ আখ্যা দিয়ে ক্যামেরন বলেন, ‘আমাদের আশা হলো প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে বিশ্বের দৃষ্টিনিবদ্ধ করা উচিত হামাসের দিকে। তারা এখনো সেইসব মানুষকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে কিছু বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে বন্দিদের (ফিলিস্তিনি) মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এবং যুদ্ধে একটি বিরতি হবে। এখন এটাই ঘটা প্রয়োজন এবং এটিই আমি আশা করি, আমরা এটার ওপরই ফোকাস করতে পারব।’

এছাড়াও জাপান ও কানাডা সরকারও ইসরায়েলকে উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ‍যুদ্ধ এড়াতে হবে।’

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ইরানের আক্রমণে ইসরায়েলের কোনো প্রতিক্রিয়া বাড়বে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে তিনি ‘পাহাড়ের কিনারায়’ বলে বর্ণনা করেছেন। বোরেল বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের কিনারায় আছি এবং আমাদের এখান থেকে দূরে সরে যেতে হবে। আমাদের ব্রেক এবং রিভার্স গিয়ারে পা রাখতে হবে।’

বোরেল আরও বলেন, ‘ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ইইউর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা দরকার। এটা সবার স্বার্থে যে, ইরান পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত না হয় এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। রবিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন জোসেফ বোরেল।’

এদিকে চীন রাশিয়াও ইসরায়েলকে পাল্টা হামলা ও যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বৃদ্ধির আশঙ্কায় আমরা শঙ্কিত। ইসরায়েলকে আহ্বান করবো পাল্টা যুদ্ধ এড়ানোর। কারণ আরও উত্তেজনা কারো স্বার্থ রক্ষা করবে না।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে সংযমী হতে হবে। উত্তেজন বৃদ্ধি হয় এমন কিছু এড়াতে হবে।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে’। এটি এখন প্রশমিত ও উত্তেজনা কমানোর সময়। গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ আসন্ন, কারণ সাহায্য সংস্থাগুলো মনে করে যে পর্যাপ্ত সাহায্য সরবরাহ বেসামরিকদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং এখন যুদ্ধে বন্ধের সময়। উত্তেজনা এড়াতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এসআইএস)