ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র, উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান যুক্তরাজ্যের
হোয়াইট হাউস ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই সতর্কতার কথা জানিয়েছেন।
তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের হামলার পর ইসরায়েল সরকার যখন পাল্টা হামলার কথা বিবেচনা করছে তখন এমন বার্তা দিলো যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী ভূপাতিত করেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করতে বিন ইয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে সতর্ক করছে মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যও উত্তেজনা আর না বাড়াতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন, এমনটাই জানিয়েছেন তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সময় রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে "খুব সাবধানে এবং কৌশলীভাবে চিন্তা করতে" বলেছেন।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে ইসরায়েল এর বিনিময়ে ‘সেরাটাই পেয়েছে’, যার শুরু হয়েছিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলায় সিনিয়র ইরানি সামরিক কমান্ডারদের হত্যার মাধ্যমে।
ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সময়, তাদের প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত হয়েছিল বা বাধা দেওয়া হয়েছিল- যা মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের ওপর ইসরায়েলি সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের চিহ্ন হিসাবে দেখছেন।
ইরান হামলার চালানোর সময় মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। ৮০টিরও বেশি ড্রোন এবং কমপক্ষে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরাকের ওপর দিয়ে ভূপাতিত করে মার্কিন বিমান ও জাহাজ বা বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে সাতটি ড্রোন এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল যেগুলো তারা ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।
ইসরায়েলের দিকে যখন একযোগে প্রায় ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসছিল সে তুমুল উত্তেজনার মাঝেই বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে কথোপকথন হয়।
ওই টেলিফোন আলাপে দুই নেতা "কীভাবে পরিস্থিতি প্রশমন করা যায় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ভাবা যায়, সে সম্পর্কে" আলোচনা করেন। বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসরায়েল "এর সেরাটি পেয়েছে"।
এই কর্মকর্তা অবশ্য বলতে রাজি হননি যে, হোয়াইট হাউস ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে কি না। তারা শুধুমাত্র জানিয়েছে যে "ইসরায়েলিদের এই হিসেব নিকেশ করতে হবে"।
দিনের প্রথম দিকে মার্কিন টেলিভিশনে নেটওয়ার্কগুলোয় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বারবার বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে তারা বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে চায়। প্রশাসনের শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানে একই বার্তা পাঠানো হয়েছে।
কারবি এবং এর কর্মকর্তা উভয়েই বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষা করতে থাকবে, তবে ইসরায়েলের কোনো প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের এতে যোগ দেওয়া উচিত।
ইসরায়েলে ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, তারা ইসরায়েলের জন্য সামরিক সহায়তা পাস করতে "আবারও চেষ্টা করবেন"। ইসরায়েলে আরও সাহায্য পাঠানোর পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ডেমোক্র্যাটদের আহ্বানের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল।
এদিকে ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এমনকি তেহরানের এই হামলাকে ইরানের ‘দ্বৈত পরাজয়’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
সোমবার এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ক্যামেরন বলেছেন: ‘সুতরাং আমাদের আশা হলো প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে বিশ্বের দৃষ্টিনিবদ্ধ করা উচিত হামাসের দিকে। তারা এখনো সেইসব মানুষকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে কিছু বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এবং যুদ্ধে একটি বিরতি হবে। এখন এটাই ঘটা প্রয়োজন এবং এটিই আমি আশা করি, আমরা এটার ওপরই ফোকাস করতে পারব।’
(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/ইএস)