উচ্চ আদালতে শিক্ষার্থীদের হতাশ হতে হবে না: জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৯:৪৬ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪, ২০:২৩
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উচ্চ আদালতে শিক্ষার্থীদের হতাশ হতে হবে না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি— সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।’
বুধবার সন্ধ্যা সাতটার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত আমি সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘সরকার হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালের ছাত্রসমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে সরকার। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারি পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। যার শুনানির দিন ধার্য করেন উচ্চ আদালত। এসময় ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করে।’
আন্দোলনের শুরু থেকে সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রদর্শন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন তাদের সুযোগ দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তাও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো কিছু কুচক্রী মহল আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার চেষ্টায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। কতগুলো মূল্যবান জীবন চলে গেলো। আপনজন হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মৃত্যুবরণ করেছে আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যা ঘটেছে তা কখনোই কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ফেলে দিয়েছে। অনেক ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের ওপর লাঠিপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। একজন মৃত্যুবরণ করেছে ও অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সাধারণ পথচারী ও দোকানিদের আক্রমণ...এমনকি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধাপ্রদান করা হয়। আবাসিক হলের প্রভোস্টদের হুমকি দেওয়া হয়, আক্রমণ করা হয়। শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সঙ্গে এসব সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাদের পরিবারের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহ ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার আমি করব।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটেছে সেবিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।’
আরও পড়ুন>কোটা আন্দোলনে হতাহত-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিলো, তা তদন্ত করে বের করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যে কোনো সময় সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা বিষয়ে সজাগ থাকে। একইসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সকলের সহযোগিতায় স্মর্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমি আবারো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। খোদা হাফেজ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’
(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এলএম/এসআইএস/ইএস)