সাদিক এগ্রোর সেই দেড় কোটির গরুর সন্ধান মোহাম্মদপুরে

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৪ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৭:০৮

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস

শুরুটা হয়েছিলো গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে প্রানীসম্পদ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ঠিক একদিন পরই সেই মেলায় হাজির করা হয় দানবাকৃতির নিষিদ্ধ ব্রাহমা প্রজাতির গরু ‘সুলতানকে’।

সুলতানকে মেলায় নিয়ে আসেন সাদিক এগ্রো খামারের মালিক মোহাম্মদ ইমরান। এরপর সুলতানকে দেখতে মেলায় বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। ১হাজার ৪শ কেজি ওজনের সুলতানকে বিক্রির জন্য ইমরান দাম হাকান দেড় কোটি টাকা।

কেজি দরে মাংস বিক্রি করলেও এই গুরুর দাম এত বেশি হবার কথা নয়। তবে ওই সময়ে ইমরান বলেছিলেন, ‘এটি উচ্চবংশীয় গরু। তাই এই সুলতানের দাম অনেক বেশি।’

প্রাণীসম্পদের মেলায় গরুটি বিক্রি না হওয়ায় গত কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য বাজারে তোলা হয়। বিভিন্ন সময় সাদিক এগ্রো বলেছে, দেড় কোটি টাকার সুলতান বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু বুধবার (৩ জুলাই) আলোচিত ‘সুলতান’কে জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

বুধবার দুপুর ২টায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর এলাকার ১৫ নম্বর রোডে সাদিক এগ্রোর একটি খামারে অভিযান চালায়। সেখানেই পাওয়া যায় সুলতানসহ ৬টি ব্রাহমা প্রজাতির গরু। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিষিদ্ধ ১৮টি ব্রাহামা জাতের গরু জব্দ হয়। এই গরুগুলোর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিল সাদিক এগ্রো। শাহীওয়াল জাতের ভুয়া নাম দিয়ে গরুগুলো আমদানি করেছিল তারা।

এরপর ঢাকা কাস্টম হাউস ব্রাহমা গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেগুলো সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়।

কিছুদিন পর সেই খামারের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গরুগুলো বাগিয়ে নেন ইমরান। এরপর তা কোটি টাকা দাম হাকিয়ে বাজারে তোলা হয়। ২০২১ সালের বিমান বন্দরে জব্দকৃত গরুগুলোরই একটি আজকের দেড় কোটি টাকার ‘সুলতান’।

ঢাকা টাইমস জানতে পেড়েছে, প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর সুলতানসহ ১৭টি গরু ২৮০ টাকা দরে মাংশ বিক্রি করার শর্তে নিলামে দিয়েছিল।

সাদিক এগ্রোর মোহাম্মদপুরের এই খামারে কর্মরত শ্রমিকরা ঢাকা টাইমসকে জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে গরুগুলো এখানে আনা হয়েছিল।

গত কয়েকদিন আগে সাদিক এগ্রোর নিষিদ্ধ ব্রাহমার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছে দুদক। এর আগে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে করা খামার গুড়িয়ে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

এরপর গত ১ জুলাই (সোমবার) সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজন কেন্দ্রে অভিযান চালায় দুদক। পরে সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সাভারের বিরুলিয়ায় থাকা সাদিক এগ্রোর আরেকটি খামারে অভিযান চালায় দুদক। সেখানে ৭টি ব্রাহমা গরুর সন্ধান পাওয় যায়। ওইদিনই দুদকের পৃথক অভিযানে কেরাণীগঞ্জের একটি খামারে আরেকটি সাদা রঙের দেড় কোটি টাকা মূল্যের ব্রাহমা গরু এবং দুটি বাছুর শনাক্ত করে দুদকের অভিযানিক টিম।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার মোহাম্মদপুরের আরেকটি খামারে সুলতানের সন্ধান পাওয়া গেল দুদকের অভিযানে।

সাদিক এগ্রোর নবীনগরের এই খামারে বর্তমানে ৬ জন কর্মচারী কাজ করছেন। প্রায় ৩ বছর আগে এই এলাকায় সাদিক এগ্রোর খামার প্রতিষ্ঠা করেন আলোচিত ইমরান।

১২ হাজার টাকা বেতনে সাদিক এগ্রোতে কর্মরত মো. হজরত ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে আমি ৩ মাস আগে এখানে আইছি। মাঝে মাঝে মালিক ইমরান এখানে আসেন। বেশি সময় থাকে না। আগে অনেক বড় গরু আইতো, এহন কম আহে।’

এগ্রোটির আরেক কর্মচারী জাহিনুর রহমান বলেন, ‘রাজবাড়ি থেকে আমি ৪ মাস আগে ২০ হাজার টাকা বেতনে এইখানে আসছি। কোরবানির ঈদের আগে এখানে বড় বড় ব্রাহমা আনছিল। পরে সেইগুলা নিয়া গেছে মালিক। এরপর গতরাতে এই ৬টা গরু নতুন নিয়া আইছে এইহানে।’

সাদিক এগ্রোর আরেক খামারে দুদকের অভিযান, মিলল ৬টি ব্রাহমা গরু

কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটির ব্রাহমা গরুর সন্ধানে দুদকের অভিযান

‘সাদিক এগ্রোতে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু সরবরাহ,’কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে দুদকের অভিযান

সাদিক এগ্রোর সাভারের খামারে নিষিদ্ধ ৭টি ব্রাহমা বাছুর, দুদকের অভিযানে ধরা

ঢাকা টাইমস অনুসন্ধান: কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর সন্ধান

(ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/এইচএম/এসআইএস)