ঢাকা টাইমস অনুসন্ধান
কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর সন্ধান

এবার কেরানীগঞ্জ থানার জয়নগর এলাকায় এস.এ.সি এগ্রো এন্ড ফ্রুডস নামের একটি খামারে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১টি ব্রাহমা প্রজাতির গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গরুটির মালিক ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক এগ্রোর ইমরান।
সরেজমিনে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এগ্রো ফার্মটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে চারপাশে মশারি টানিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছে দৈত্যাকার কোটি টাকার ব্রাহমা গরুটি।
কোরবানির ঈদের আগে সাদা কালারের এই ব্রাহমা গরুটির দাম হাঁকা হয়েছিল এক কোটি টাকা। ঈদে যেটার দাম হাঁকা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। এছাড়াও এগ্রোর ভিতরে আরও দুইটি ব্রাহমার বাছুর দেখতে পাওয়া গেছে।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক এগ্রোর মালিক কাউবয় ইমরানের ডেরায় থাকা নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুগুলো কেরানীগঞ্জের এস.এ.সি এগ্রোতে নিয়ে আসে ইমরান।
ফরিদপুর থেকে ৩মাস আগে এই এগ্রোতে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন সাব্বির। ঈদের ছুটি কাটিয়ে রবিবার তিনি এখানে এসেই এই ব্রাহমা গরুটি দেখতে পান।
এগ্রোতে দায়িত্বে থাকা সাব্বির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি ৩ মাস যাবত এখানে চাকরি নিয়েছি। বর্তমানে ২৫টি বড় গরু আছে। গতকাল আমি ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখানে এসেছি। এসেই এখানে বড় এই ব্রাহমা গরুটি দেখতে পাই।’
জানা গেছে, ৩ বছর আগে এক নারী তার স্বামীকে নিয়ে এস.এ.সি এগ্রো প্রতিষ্ঠা করেন। এগ্রোটির মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন ফারিয়া ও তার স্বামী আহনাব আকিব। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন মো. ইয়াসিন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ম্যানেজার ইয়াসিন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এগ্রোতে ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন মোসাম্মত ডলি। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখানে মাঝে মধ্যে বড় গরু আসে। সাদা কালারের বড় ব্রাহমা গরুটি দুইদিন আগে এখানে আনা হইছে স্যার।’
সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক এগ্রো ফার্মের মালিকের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের।
তারা জানান, এই এগ্রোর সঙ্গে সাদিক এগ্রোর সুসম্পর্ক রয়েছে। এখানে ব্রাহমা গরু রয়েছে। বড় ব্রাহমা গরুটি সাদিক এগ্রো থেকে এখানে আনা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে ২০১৬ সালে আমদানি ও পালন নিষিদ্ধ করা হলেও বেশকিছু চক্র মিলে অবাদে এই গরু তাদের খামারে পালন করছে। কিন্তু তাদের কাছেও বা কীভাবে আসে এই নিষিদ্ধ গরু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গরুগুলো নিষিদ্ধ হলেও কৌশলে বিদেশ থেকে কমদামে আমদানি করে দেশের কিছু এগ্রো ফার্ম। এরপর গরুগুলো বিমানবন্দরে জব্দ হলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। খামারের কর্মকর্তাদের আগে থেকেই ম্যানেজ করে এগ্রো ফার্মের মালিকরা। এরপর সেই গরুগুলো সল্পমূল্যে নামমাত্র দামে নিলামে ক্রয় করেন তারা।
তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন যাবত এই সাদিক এগ্রোর ইমরান কৌশেলে ব্রাহমা গরু আমদানি করে বিমানবন্দরে জব্দ করায়। এরপর সেখান থেকে গরুগুলো নিয়ে তার খামারে পুরে রাখে।
বর্তমানে এই এগ্রোতে মোট ৩টি ব্রাহমা গরু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি এবং বাকি দুইটি ব্রাহমার বাছুর।
২০২১ সালের ৫ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিষিদ্ধ ১৮টি ব্রাহামা জাতের গরু জব্দ হয়। এই গরুগুলোর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিল সাদিক এগ্রো। শাহীওয়াল জাতের ভুয়া নাম দিয়ে গরুগুলো আমদানি করেছিল তারা।
এরপর ঢাকা কাস্টম হাউস ব্রাহমা গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হস্তান্তর করলে সেগুলো সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়।
পরে সেই খামারের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গরুগুলো বাগিয়ে নেন ইমরান। এরপর তা কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলা হয়।
গত এপ্রিল মাসে সাদিক এগ্রোর ইমরান রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত প্রাণিসম্পদ মেলায় কোটি টাকা দাম হাকিয়ে ১ হাজার ৩শ কেজি ওজনের একটি ব্রাহমা গরু উঠান।
এছাড়াও কোরবানির ঈদে দেড় কোটি টাকা দাম হাকিয়ে ১ হাজার ৪শ কেজি ওজনের ব্রাহমা বিক্রির ঘোষণা দেন কাউবয় ইমরান।
আরও খবর:
‘সাদিক এগ্রোতে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু সরবরাহ’ কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে দুদকের অভিযান
সাদিক এগ্রোর সাভারের খামারে নিষিদ্ধ ৭টি ব্রাহমা বাছুর, দুদকের অভিযানে ধরা
(ঢাকাটাইমস/১জুলাই/এইচএম/এসআইএস)

মন্তব্য করুন