পূর্বাচলের পাশে আলোচিত নীলা মার্কেট উচ্ছেদ

রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১, ১২ ও ১৩ নং সেক্টর এর কয়েক শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে আছে আলোচিত নীলা মার্কেটও। ঢাকা লাগোয়া এই বাজারটি থেকে টাটকা সবজি কিনতে প্রতিদিন শত শত মানুষ যেতো সেখানে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল ১০ টায় এ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ৬ প্লাটুন রিজার্ভ পুলিশ ও রুপগঞ্জ থানা পুলিশসহ র‌্যাব ১ এবং ১১ এর সদস্যরা মোতায়েন ছিল।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, রাজউকের পক্ষ থেকে মাইকিং করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সকাল থেখে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। অভিযানের জন্য দুইটি বুলডোজার, তিনটি পে-লোডার, দুইটি গ্যাস কাটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। আমাদের উচ্ছেদ অভিযান আগামীকালও (মঙ্গলবার) অব্যাহত থাকবে।

ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সেক্টরে অবৈধ স্থাপনা, দোকান, অস্থায়ী বাজার, খাবার হোটেল নির্মানসহ বিভিন্ন পাকা ও সেমি-পাকা কয়েকশ ঘর গড়ে উঠেছিল। ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ অন্যান্য সংরক্ষিত স্থানে বিভিন্ন প্রকার অফিসসহ নানা ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যার ফলে প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে রাজউকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। বিষয়টি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়সহ উচ্চ পর্যায়ে আলোচিত হয় এবং পরিকল্পিত নগরায়নের ক্ষেত্রে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বালু নদীর পারের এই এলাকায় এর আগেও বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে ব্যর্থ হয় রাজউক। তাই এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে যায় সংস্থাটি।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের ফলে জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছেন কয়েক হাজার মানুষ। অনেকেরই একমাত্র উপার্যনের মাধ্যম ছিল এসব দোকান। শুধু দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, উচ্ছেদের সময় উপড়ে ফেলা হয়েছে আম, লিচু, পেয়ারা, পেপে সহ বিভিন্ন ফলের গাছ।

পূর্বাচলের জনপ্রিয় একটি বাজার ছিল 'নীলা মার্কেট'। বাজারটি টাটকা শাকসবজি, ফলমূল ও টাটকা মাছের জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল। ঢাকা সহ আশপাশের এলাকার লোকজন এই বাজার থেকে টাটকা শাকসবজি কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু উচ্ছেদের সময় এই বাজারের সবগুলো দোকানই বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে রাজউক। বাজারের স্বল্প ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের উপার্যনের একমাত্র উৎস ছিলো এসব দোকান।

অভিযান পরিচালনার সময় ১নং সেক্টরের ভোলানাথপু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। মসজিদ কমিটির দাবি, এই মসজিদটি জমির মালিক অনেক আগেই মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেয়। তাই রাজউক মসজিদটি উচ্ছেদ করতে পারে না। এছাড়া মসজিদের জমিতে চারটি দোকান রয়েছে, যেগুলো মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তিতে রয়েছে।

এ নিয়ে বেশকিছুক্ষণ রাজউকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ ব্যাপারে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মসজিদ কমিটির দলিল ও বিভিন্ন কাগজপত্র দেখেছি। মসজিদ পবিত্র ঘর, তাই আমরা মসজিদের ব্যাপারটি বিশেষভাবে বিবেচনা করছি। তবে মসজিদের পাশে নির্মিত চারটি দোকান আমরা উচ্ছেদ করব। মসজিদ কমিটি এসব দোকান উচ্ছেদে আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

উচ্ছেদ পরিচালনা কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, রাজউকের প্রকল্প পরিচালক আবদুল আউয়াল, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহীনুল ইসলাম, অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামান, মেডিকেল অফিসার মো. শাকিল, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনিরুল হক, আবু সাঈদ খন্দকার, ড. সাবের আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী জামশেদ আলী, সাব্বির বিন তাহের প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/০৮মে/আইআর/ডব্লিউবি