দুই মণ ধানের দামেও মিলছে না ১ কেজি ইলিশ!

বরগুনায় শুরু হয়েছে আউশ ধান কাটার উৎসব। চলতি মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি। প্রবাদ আছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’— সেই মাছ এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে জাতীয় মাছ ইলিশ আমাদের পান্তা ভাতের সঙ্গী হয়ে থাকলেও এখন তা কিনতে হচ্ছে দুই মণের বেশি ধানের বিনিময়ে।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দুই মণ ধানের দামে বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় হাটগুলোতে এখন এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ কেনা যায়। বরগুনা সদরে বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৩০ টাকায়। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমেছে মণপ্রতি ৮০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত।

বরগুনা পৌর মাছ বাজারে চলতি মৌসুমে স্থানীয় নদীগুলোর ইলিশ ১ কেজি ওজনের বেশি হলে প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয় ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এই বরগুনা জেলা উপকূলীয় অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও দাম তুলনামূলক বেশি। তবে এত টাকায় সবার পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়।

পৌর মাছ বাজারের ইলিশ বিক্রেতা কামাল জানান, আগামী ১ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইলিশ রপ্তানির কারণে ইলিশের দাম একটু বেশি। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনে একটু লাভ হলেই বিক্রি করে থাকি।

সদর উপজেলার বাওয়ালকর এলাকার বাসিন্দা কৃষক তোতা মিয়া মাছ কিনতে এসে ইলিশ মাছের দাম শুনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি ইলিশ খাবার ইচ্ছা আমার নাই। ধানের দাম কম থাকায় আমাদের কৃষকের আনন্দ নাই। ফলে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে জাটকা খেয়ে ইলিশের স্বাদ পূরণ করবেন বলে অনেকে মনে করেন। কৃষকরা ধানের মূল্য বৃদ্ধির দাবি করে সরকারের কাছে।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তারেক বলেন, ইলিশ মাছের দাম একটু বেশি তারপরও ইলিশের মৌসুমে ইলিশ ছাড়া কি চলে?

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে ইলিশ মাছের আহরণ ২০১৯-২০ সালে সাগরে ৬৮ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন, নদীতে ৫ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন। মোট ৭৩ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।

অন্যদিকে আউশের ভরা মৌসুমেও বরগুনায় বেড়েছে চালের দাম। বাজারে ধানের দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে তার প্রভাব পড়েনি একটুও। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ সব ধরনের ভোক্তারা।

জেলা খামারবাড়ির তথ্য মতে, আবাদের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩০৭৫ হেক্টর জমিতে, আবাদকৃত জমি ৫২৮১১ হেক্টর, কর্তনকৃত জমি পরিমাণ ১২৫২৮ হেক্টর, হেক্টর প্রতি ফলন ২.৩০ মে. টন, চলতি মৌসুমে মোট আউশ ধানের উৎপাদন ২৮৮১৪.৪ মে. টন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এআর)