জুলাই বিপ্লবকে ধারণ না করার অভিযোগ ববি উপাচার্যের বিরুদ্ধে, পদত্যাগে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ১২টার মধ্যে তাকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানান, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী দেশের সকল খাতে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সকল সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর ভিত্তি করে এমন অভিযোগ করছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য যোগদানের পরে প্রাথমিক শুভেচ্ছা বিনিময় ব্যতীত এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে কোনো ধরনের মতবিনিময় সভা করেননি। জুলাই বিপ্লবে সর্বপ্রথম স্বাধীন ক্যাম্পাস হিসেবে স্বীকৃত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেই দিনগুলোতে আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের খোঁজ খবর বা তাদের থেকে সেইদিনগুলোর অভিজ্ঞতা শোনার বা মতবিনিময় করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি বিপ্লবের মাধ্যম পরিবর্তনের ধারায় নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্য।
তারা আরও বলেন, ৫ই আগষ্টের পর প্রসাশনের নিকট শিক্ষার্থীদের ২২ দফা দাবি পেশ করা হলেও সেগুলো নিয়েও তার উল্লেখযোগ্য কোনে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এসব বিষয় নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনাও করছেন না। তাদের দাবিগুলোর এইভাবে অবমূল্যায়নকে জুলাই বিপ্লবী চেতনার পরিপন্থী হিসেবেই দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা আরও জানান, নিয়োগ প্রাপ্তির দুই মাস হলেও এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রম গুলোতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য
পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্ণধারের কাছ থেকে। বরং ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যাকারী স্বৈরাচার সরকারের নামে বিদ্যমান হল এবং স্বৈরাচারের দোসরদের নামে এখনো বিভিন্ন স্থাপনার নাম বলবৎ থাকলেও যোগদানের দুইমাসেও একটি সিন্ডিকেট সভার আহবান করে সেগুলোর পরিবর্তন করতে করেননি এই উপাচার্য। অথচ এই দাবিটি জুলাই বিপ্লবী চেতনার মূল দাবি গুলোর অন্যতম হলেও তার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। তাছাড়াও তিনি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন যা জুলাই বিপ্লবী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান বিজয় ২৪ আয়োজিত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদের স্মরণে “স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪" এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। টুর্নামেন্টটি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হলেও তার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একবার ও সেই সকল শহীদ স্মরণ করেননি এমনকি তাদের নিয়ে কোনো কথাই বলেননি তিনি এমনটিই অভিযোগ করছেন সেখানে উপস্থিত সচেতন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তার বক্তব্যের একটি রেকর্ড ও আসে এই প্রতিবেদকের নিকট, সেখানেও অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়।
এই বিষয়টি নিয়ে খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, টুর্নামেন্টি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদের স্মরণে আয়োজিত হলেও অতন্ত্য পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্য ভিসি ম্যাম খেলোয়াড়দের শুভ কামনা জানানো ব্যতীত বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের স্মরণে একটি বাক্যও উচ্চারণ করলেন না। আমরা উপস্থিত সকলেই অবাক ও মর্মাহত হই। অথচ সেখানে আরো আলোচনা রাখা সবাই বিপ্লবে হতাহত হওয়াদের টুকটাক স্মরণ করেছেন। তার এমন কর্মকান্ডই প্রমান করেন যে আসলে তিনি এই বিপ্লবীকে কতোটা ধারণ করে। তাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে যে গুঞ্জন শোনা যায় তারই প্রতিফলন এসব কর্মকাণ্ড। বাংলার প্রথম স্বাধীন ক্যাম্পাসে আমরা কি এমন ভিসিই চেয়েছিলাম?
হলগুলোসহ বিভিন্ন স্থাপনায় স্বৈরাচার দোসরদের নাম অপসারণের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা আফসানা বলেন, আমরা স্বৈরাচারের কোন চিহ্ন কোথাও রাখতে চাই না। অথচ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার এত পরেও আমাদের ঘাড়েই রয়েছে স্বৈরাচারের নাম। হলের নাম প্রস্তাব করা সত্ত্বেও এখনো হলের নাম পরিবর্তন হয়নি। নতুন ছেলেমেয়েরা পুরনো নামে হলে উঠবে। ভিসি ম্যামকে বলা সত্ত্বেও তিনি এখনও এর কোন পদক্ষেপ নেন নাই। যা খুবই হতাশা ও দুঃখজনক।
উপাচার্য জুলাই বিপ্লবকে কতোটা ধারণ করেন তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে নামক প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনে গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, একটা বিপ্লবী পরিবর্তনের ধারায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন তিনি। যেহেতু তার আগমনটাই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে কেন্দ্র করেই হয়। তাই বিপ্লবের এই চেতনাকে ধারণ ও যথাযথ সংরক্ষণ করা তাহার নৈতিকদায়িত্ব ছিল। প্রশাসনের প্রতি আমাদের যে ২৮ দফা দাবি তা বাস্তবায়নের কোন ধরনের অগ্রগতি নাই, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেয়া তো দূরের কথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নেই কোন
পদত্যাগের আল্টিমেটামের বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলাই বিপ্লবের যে স্পিরিট তা উপাচার্য ধারণ করেন না। দীর্ঘ দুইমাস দায়িত্ব পালনকালে আমরা সেটাই দেখেছি। তার দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি কোনোভাবেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে থাকতে পারেন না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপাচার্যের পদত্যাগের। আমাদের এক দফা এক দাবি। আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
এবিষয়ে আজ বিকাল অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের আলোচনা সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, সকলের সমন্বিত সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আমার আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সবার সর্বসম্মতিক্রমেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এ বিষয়ে আমাদের সকলকেই কথা বলতে হবে।"
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে উপাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/্এস
মন্তব্য করুন