অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বাজেট জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি: সাকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৫, ১৮:২৫
অ- অ+

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তীতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাজেটে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, বাজেট নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী যে নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল তা বাস্তবায়ন করতে হলে যে ধরনের জনমুখী বাজেট দরকার তা এই বাজেটে নেই।

বুধবার হাতিরপুল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট পর্যালোচনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসন আমলে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে অর্থনীতি লুটপাঠের সাথে তা গভীরভাবে সম্পর্কিত। আমরা লুটপাঠের অর্থনীতি বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান করেছি। তরুণ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এই বাজেটে কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা নাই। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক কুমার রায়।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রথম বাজেটে জনগণের পক্ষ থেকে যে প্রত্যাশা ছিল এই বাজেটকে তার ভিত্তিতে এবং অর্থনীতির উৎপাদনশীল রূপান্তরের সূচনা বিন্দু হিসেবে আমরা এই বাজেটের পর্যালোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখতে পেয়েছি এই বাজেট রূপকল্পের দিক থেকে পুরনো বাজেটেরই ধারাবাহিকতা। ফলে তা জনপ্রত্যাশাকে পূরণ করতে পারেনি। এই পর্যালোচনায় প্রথমেই আমরা দেখবো সরকারের কর-প্রস্তাবের অর্থাৎ, বাজেটের আয়ের দিকগুলো। কেননা বাজেট সাম্প্রতিক অতীতের তুলনায় যতই বড় বা ছোট করা হোক এর বাস্তবায়নযোগ্যতা নির্ভর করছে সরকার ওই বাজেট অর্থায়ন করার যে প্রক্রিয়া প্রস্তাব করা হয়েছে। তা কতটুকু বাস্তবসম্মত- তার ওপর। পরবর্তীতে কোন খাতে কতটা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সবিস্তারে আলাপ ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন অংশীজনের দেয়া বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আপনারা দেখেছেন।

তিনি বলেন, মাত্রারিক্ত উচ্চাভিলাষের কারণে বিশ্বাসযোগ্য নয় প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের মাঝে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে সরকার। রাজস্ব আয়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রাটি যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ৮.৯ শতাংশ বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষীই বলতে হবে। কেননা দেশে বিনিয়োগ প্রবাহ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রপ্তানি বহাল রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১০ পণ্য আমদানিতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।

সাকি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই সংস্কারের বড় আওয়াজ দেয়ায়, কর-কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল বাজেটে তার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে না। আসছে বছরেও রাজস্ব আয়ের জন্য সরকার পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারেনি। পরোক্ষ কর ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল আয়শ্রেণীর নাগরিকদের ওপর বর্তায়। তাই রাজস্বের জন্য পরোক্ষ করা তথা ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা যত কমানো যায় কর প্রস্তাব ততই জনবান্ধব হয়। চলতি অর্থবছর-সহ সাম্প্রতিক পাঁচটি অর্থবছরে এনবিআর মোট যে রাজস্ব আহরণ করেছে তার ৩৯ শতাংশই এসেছে পরোক্ষ কর বা ভ্যাট থেকে। দেখা গেছে এনবিআর-এর রাজস্বের সবচেয়ে বড় উৎসই এই ভ্যাট। আসন্ন অর্থবছরে এনবিআর-এর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করা হবে ভ্যাট থেকে, যা এনবিআরের মোট লক্ষ্য মাত্রার ৩৮ শতাংশ। ফলে পুরোনো ধারাতেই রাজস্বের জন্য সরকার হরেদরে সকলের ওপর করের বোঝা চাপানোর পথে হাঁটতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লাগামহীনতা থেকে মধ্যবিত্তদের রেহাই দিতে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়ানোর প্রত্যাশা থাকার পরও নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবে করমুক্ত আয়ের সীমা আগেরটিই বহাল রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, আসছে অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখলেও অর্থ মন্ত্রণালয় পরের অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা আরও ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু ওই অর্থবছরে সবচেয়ে নিচের ট্যাক্স স্ল্যাবের করদাতাদের ওপর প্রযোজ্য করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার কথাও বলা আছে। তাই যদি হয়, তাতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়লেও যারা করের আওতায় পড়বেন তাদের মধ্যে তুলনামূলক কম আয়কারি ব্যক্তিদের ওপর করের বোঝা এখনকার তুলনায় বাড়বে। অথচ যারা ধনী তাদের ওপর করের বোঝা কমবে। অর্থাৎ আয়কর থেকে আসা রাজস্ব বৃদ্ধির পুরো চাপটা পড়বে মধ্যবিত্তের ওপর। বাজেটে কর ফাঁকি প্রতিরোধের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। নেই ধনীদের কাছ থেকে অধিক কর আদায় করে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ও শিক্ষা স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করার নীতি। ফলে তা ধনী গরিবের ব্যবধান বা আয় বৈষম্য কমিয়ে একটি ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অতীতের বাজেটগুলোতে সরকারের তরফ থেকে বাজেটের আকার বাড়িয়ে দেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়ানোর প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় কাজে বড় বড় বরাদ্দ দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ খাত ও উপখাতগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ আগে থেকেই বাজেটের আকার ছোট করার কথা বলে আসছিল। মোট জাতীয় বাজেটের আকার এবারের প্রস্তাবনায় কিছুটা সত্যিই কমানো হয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে বাজেটে কাটছাটের প্রভাব শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের ওপর পড়েছে, যা একেবারেই কাম্য ছিল না। সচেতন মহল থেকে বেশ আগে থেকেই বলা হচ্ছিল যেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ কমানো না হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকার ওই আকাঙ্ক্ষা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত করতে পারেনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এবারো শিক্ষার মোট বরাদ্দ জিডিপির ১.৭ ভাগের আশেপাশেই রয়েছে আগের মত। অথচ বাংলাদেশের মতো দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ এখানে জনশক্তি তৈরির খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। তবে বরাদ্দের মোট পরিমাণের মতোই কিংবা আরো গুরুত্বপূর্ণ হল বরাদ্দের খাত। আগেও শিক্ষায় সরাসরি বরাদ্দের সঙ্গে অন্যান্য বরাদ্দ যুক্ত করে এ খাতের বরাদ্দ বেশি দেখানোর প্রবণতা ছিল। এবারেও তা বহাল আছে।

(ঢাকা টাইমস/০৪জুন/জেবি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট
শাকিব লক্ষ্মী একটা ছেলে: জয়া আহসান
ঈদের শাহী স্বাদে গরুর মাংসের কোরমা ঐতিহ্যবাহী রেসিপি
একি বললেন ইলন মাস্ক, ‘আমাকে ছাড়া জিততে পারতেন না ট্রাম্প’!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা