অভিনয়ে সেরা, গানেও দক্ষ

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নয় বরং তাদের প্রতিভাকে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। সহজ কথায়, নানান গুণের অধিকারী তারা। এমন কিছু মানুষ আছেন আমাদের বিনোদন জগতেও। যাদের কেউ কেউ অভিনয় করার পাশাপাশি শখের বশে গান করেন, আবার কেউ গান গাওয়ার পাশাপাশি শখ মেটাতে করেন অভিনয়। এমন পাঁচ তারকাকে নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।
ফজলুর রহমান বাবু
বাংলাদেশের অভিনয় জগতের অন্যতম একটি বড় বিজ্ঞাপন ফজলুর রহমান বাবু। একজন জাত অভিনেতা। যিনি খুব সহজেই মানুষকে হাসাতে পারেন, আবার মুহূর্তে পারেন কাঁদাতে। অর্থাৎ, যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে তিনি খুব সহজেই মানিয়ে যান। ছোট ও বড় পর্দায় তার অভিনয় দেখে দর্শক বরাবরই মুগ্ধ হন।
তেমনি কারও অজানা নয় যে, অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে গান গেয়েও মুগ্ধতা ছড়ান ফজলুর রহমান বাবু। তিনি গান গেয়েছেন সিনেমায়, গান গেয়েছেন অ্যালবামের জন্য। ফরিদপুরের কৃতি সন্তান বাবু ২০০৮ সালে মিশ্র অ্যালবাম ‘মনচোর’-এ চারটি গানে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন।
এরপর ২০০৯ সালে নিজের অভিনীত ‘মনপুরা’ ছবিতে ‘নিথুয়া পাথারে’ ও ‘সোনা হায় হায় রে’ গান দুটিতে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে পুরোদস্তুর সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছর প্রকাশ পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ইন্দুবালা’। এ পর্যন্ত তার গাওয়া প্রতিটি গানই শ্রোতাপ্রিয়।
ফলে অভিনয়ের মতো গানকেও আপন করে নিয়েছেন ফজলুর রহমান বাবু। তিনি মনে করেন, অভিনয়ের সঙ্গে গানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যদিও নিজেকে সংগীতশিল্পী বলতে নারাজ ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় এই তারকা। তার কথায়, ‘আমি গায়ক নই, তবে গান গাইতে পছন্দ করি’।
চঞ্চল চৌধুরী
ফজলুর রহমান বাবুর ক্যাটাগরিরই একজন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নাটক এবং সিনেমায় তিনিও সমান সাবলীল। চঞ্চল হাস্যরসাত্মক চরিত্রে যেমন অনন্য, তেমনি ‘মনপুরা’ ছবিতে তার শেষ পরিণতি দেখে চোখ ভিজিয়েছেন হাজারো দর্শক। অভিনয়ের পাশাপাশি সখের গায়ক হিসেবে চঞ্চলও বেশ সাড়া ফেলেছেন।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে ভূপেন হাজারিকার একটি গান গেয়ে সংগীতে যাত্রা শুরু করেন চঞ্চল চৌধুরী। এ যাবত ‘যুবতী রাধে’, ‘বকুল ফুল’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তিনি। সেগুলোর সবই বেশ সাড়া ফেলেছে। চঞ্চল বলেন, ভক্তদের অনুরোধে শখের বশে গান করি। এটা আমিও বেশ উপভোগ করি।’
তাহসান রহমান খান
তিনি দেশের একজন নামকরা মডেল, অভিনেতা, উপস্থাপক, আবার গায়ক। গিটারও ভালো বাজান। বাংলা নাটকে তাহসান রহমান খান প্রথম সারির তারকাদের একজন। পারিশ্রমিকও নেন মোটা অংকের। ইতোমধ্যে তিনি চলচ্চিত্রেও অভিষেক করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি গায়ক তাহসানও এ দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা ক্রেস্ট।
চঞ্চল ও বাবুদের থেকে একটু অন্য লেভেলের তিনি। গায়ক হিসেবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট করেন তাহসান। অর্থাৎ, অভিনয় ও গানকে তিনি সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাহসানের বেশ কয়েকটি একক অ্যালবাম রয়েছে। তার সাড়া জাগানো কয়েকটি গান হলো- ‘ফিরে এসো’, ‘অনন্তকালের পথযাত্রী’, ‘মেঘের পরে’, ‘কেন হঠাৎ এলে’।
মেহের আফরোজ শাওন
ছোটবেলায় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে অভিনয় জগতে আসেন মেহের আফরোজ শাওন। এই নির্মাতার বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তার নজরকাড়া অভিনয় দেখতে দেখতে কণ্ঠশিল্পী শাওনকেও একটু একটু করে চিনতে শুরু করেন দর্শক। হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকে তাকে খালি গলায় গান গাইতে দেখা গেছে।
এরপর ছোটপর্দা ছাড়িয়ে শাওন প্লেব্যাগ করেন বড়পর্দায়। ২০১৬ সালে নিজের পরিচালিত ও রিয়াজ-মাহি অভিনীত ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেন। ওই গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে ‘যুবতী রাধে’ গানটি গেয়ে বেশ সাড়া ফেলেন। এই অভিনেত্রী বলেন, গান একান্তই তার নিজের।
নুসরাত ফারিয়া
পুরো নাম নুসরাত ফারিয়া মাজহার। তিনি মূলত চলচ্চিত্রের নায়িকা। শুরুর দিকে করেছেন মডেলিং ও উপস্থাপনা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘আশিকী’ চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-কলকাতা মিলিয়ে ১৫টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া।
বড় পর্দার তুমুল ব্যস্ততার মাঝেই ২০১৮ সালে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এই মডেল, উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী। নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করেন আরও একটি পরিচিতি। ওই বছর ‘পটাকা’ শিরোনামে একটি মিউজিক ভিডিও করেন নুসরাত ফারিয়া। যেটির গানে তিনি কণ্ঠ দেন। ২০১৮ সালে ফারিয়ার ‘পটাকা’ যেমন হয়েছিল সমালোচিত তেমনি আলোচিত।
যাহোক, আলোচনা-সমালোচনায় যাবো না। সংক্ষেপে বললে, প্রথম গানেই সফল ফারিয়া। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছর নিজের গাওয়া দ্বিতীয় গান ‘আমি চাই থাকতে’ নিয়ে হাজির হন তিনি। এটিও সফল। ফারিয়া বলেন, গান করে তখনই আনন্দ পাই, যখন শ্রোতারা ভালো সাড়া দেন।
ঢাকাটাইমস/০১এপ্রিল/এএইচ

মন্তব্য করুন