নোয়াখালীতে খেজুর গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১৩৯ মেট্রিকটন

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:১০
অ- অ+

খেজুরের রস ও খেজুর রস থেকে তৈরি গুড় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের চিরায়িত একটি ঐতিহ্য। যুগ যুগ ধরে দেশের এই ঐতিহ্য বহন করে আসছে খেজুরের রস ও গুড়। চলতি মৌসুমে নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় ৬৭ হেক্টর জমিতে খেজুরের গুড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১৩৯ মেট্রিকটন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বলছে, ভালো শীত পড়ায় এবার ভালো রস পাওয়া যাচ্ছে, এতে গুড়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭ হেক্টর জমিতে ৭৩ হাজার ৪৩৩টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। যার মধ্যে সদরের ১০ হেক্টর, বেগমগঞ্জে তিন, সেনবাগে দুই, চাটখিলে এক, কোম্পানীগঞ্জে পাঁচ, হাতিয়ায় ৩০, সোনাইমুড়ীতে দুই, সুবর্ণচরে ১০ ও কবিরহাট উপজেলা চার হেক্টর জমির ৭৩ হাজার ৪৩৩টি গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি হেক্টর রস থেকে গুড়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭টন করে।

জানা গেছে, খেজুর গাছ কাটা গাছিদের মধ্যে কেউ নিজেদের বংশ পরম্পরায়, কেউ বা আবার শীতের মৌসুমে অর্থনৈতিক লাভের আশায় খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করেন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় খেজুরের রস সংগ্রহ করলেও সব চেয়ে বেশি গাছ রয়েছে হাতিয়ায়। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার ৯৭০টি গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে করে এ দ্বীপে খেজুরের রসের বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের রস সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ ও গুড় উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে দ্বীপের ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হেক্টর জায়গাতে থাকা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শীতের শুরু থেকে জেলায় খেজুরের গাছ কাটে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেন গাছিরা। গত কয়েকদিন ধরে শীত বেড়েছে। শীতের আমেজ খেজুর রস সংগ্রহ ও পিঠা তৈরি করে স্বজনদের বাড়ি পাঠানোর আনন্দ বিরাজ করছে গ্রামাঞ্চলে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত গাছিরা গাছে হাড়ি বসানোর কাজ করে, পরদিন ভোর থেকে শুরু হয় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা। রস সংগ্রহ করার পর বাড়ি নিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। তবে গুড়ের পাশাপাশি কাচা রসেরও চাহিদা রয়েছে। রস দিয়ে তৈরি করা হয় পায়েস, সেমাই, বিভিন্ন ধরনের পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিমধুর খাবার। বাজার ভিত্তিক প্রতি হাডি রস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর রস থেকে উৎপাদিত গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। অনেকে খেজুর গাছ কেটে রস ও গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে একসময় রস সংগ্রহে মাটির হাডি ব্যবহার করা হতো, কিন্তু কালের ব্যবধানে বর্তমানে প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্র ব্যবহার করে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাটির হাড়িতে রসের যেমন উজ্জ্বলতা থাকতো প্লাস্টিকের বোতলে তেমন একটা থাকেন না, আবার দীর্ঘসময় ধরে তা গাছেও রাখা যায় না বলছেন গাছিরা। একটি গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ লিটার করে রস সংগ্রহ করা যায়।

সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের গাছি আমিন উল্যাহ বলেন, রস মিষ্টি মধুর হওয়ায় শীতে এটির কদর অনেক বেশি। উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে ভোরে মানুষ এসে আমাদের কাছ থেকে রস ক্রয় করে নিয়ে যায়। বেশির ভাগ সময় বাজারে নেওয়ার আগেই গাছের নিচে রস বিক্রি হয়ে যায়।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, যে হারে খেজুর গাছের সংখ্যা প্রতিদিন কমে যাচ্ছে, এতে করে একটা সময় এসে এ গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। খেজুর গাছ রক্ষায় কৃষি অধিদপ্তর বা বন বিভাগ থেকে নতুন করে বিভিন্ন স্থানে খেজুরের চারা রোপনের দাবিও জানান তিনি।

একাধিক গাছির অভিযোগ শীত আসার আগে খেজুরের গাছগুলো নিজ উদ্দ্যেগে পরিচর্যা করতে হয় নিজেদের। নতুন জায়গাতে গাছ রোপনও নিজেদের করতে হয়। শীতের শুরুতে গাছগুলো পরিষ্কার করে রস পড়ার উপযোগী করে নিতে হয়। কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর বা বন বিভাগ থেকে খেজুর গাছ রক্ষায় কোন কাজ করা হয়না। বিভিন্ন এলাকার খালি জায়গাগুলোতে বন বিভাগ ও কৃষি অফিস চাইলে খেজুর গাছ রোপন করতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক বলেন, লবণাক্ত জমিতে খেজুরের চারা রোপনের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড় উৎপাদনে কোন গাছির সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মা হারালেন অর্ষা, হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিনেত্রীর স্বামীর ক্ষোভ
নারী কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁসের পর আত্মগোপনে শরীয়তপুর ডিসি!
নতুন বাজার অবরোধ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের
৫৭ দেশের সহস্রাধিক মুসলিম নেতা আজ বৈঠকে বসছেন তুরস্কে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা