হালুয়াঘাটে ৬৮০০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অন্তত সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও মঙ্গলবার ভোর থেকে ফের টানা বৃষ্টি থাকায় চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক শরাফ উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘চারজনের সংসার চলে কৃষি কাজের উপর। ধার কইরা ও নিজের জমানো কিছু টাকা খরচ কইরা এক একর জমিতে আগাম জাতের ধান লাগাইছিলাম। ধানও ভালো হইছিল। মাত্র পাকা শুরু হইছিল। পানি না আইলে ধান কাটা শুরু হইতো। কে জানতো আশ্বিনা শেষে পানিতে ডুইব্বা যাইবো খেত।’
তিনি বলেন, ‘আশ্বিনা পানিতে কিচ্ছু টেকে না। তার মধ্যে চার দিন হইয়া গেল। পানি কিছুটা কমতে শুরু করছিলে, ভাবছিলাম অর্ধ পচা ধান কাটলেও কিছুটা পাবো। কিন্তু সকাল থেকে আবার বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছি। ধান পচে চারা গজাইতে শুরু করছে। আমার সব শেষ হইয়া গেল। বউ-পুলাপান লইয়া কই যামু?’
এমন আক্ষেপ শুধু কৃষক শরাফ উদ্দিনের নয়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পাহাড়ের ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলার অন্তত ৬ হাজার ৮০০ একর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে থাকায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ১২টি ইউনিয়নের কৃষকদের। তারা জানান, অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে আনুমানিক প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে এবং ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে হালুয়াঘাট উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। এতে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন প্রণোদনাও দিয়েছিল। তারা আশা করেছিল, উপজেলার কৃষকরা ভালো ফলনও পাবেন। কিন্তু গত দুদিনের বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধুরাইল ইউনিয়নের কংস, গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট,ভুবনকুড়া ইউনিয়নের মেনং, সেওলা, কৈচাপুর ও জুগলী ইউনিয়নের দর্শা ও গাংগিনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ধুরাইল, কৈচাপুর, জুগলি, গাজীরভিটা, শাকুয়াই, নড়াইল, স্বদেশি, আমতৈল ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে ডুবে যায়। এছাড়া ৭৫ হেক্টর সবজির বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
ধুরাইল এলাকার চরগোরকপুর গ্রামের বাসিন্দা তরুণ কৃষক জজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ বছর যে পানি হয়েছে তা আমার ২৮ বছর বয়সে দেখিনি। এ বছর আমি প্রায় ৮ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলাম। সব পানির নিচে। আমরা এখন নিরুপায়।’
গোরপুর এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন তার বাড়ির সামনে তুলনামূলক উঁচু জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান পাকতেও শুরু করেছিল। এই পাকা ধান তিন দিন ধরে পানির নিচে থাকায় তিনি ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’
ধারা ইউনিয়নের বিরগুছনিয়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধইরা পানির নিচে আমন ধান। এই ধান এহন চারা গজানো শুরু করছে, আমরা কৃষকরা বাচুম কেমনে?’
এদিকে বিলডোরা ও নড়াইল ইউনিয়নে আজ (মঙ্গলবার) পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় স্থানীয় কৃষকরা ফের দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নড়াইল ইউনিয়নের গোপিনগর এলাকার কৃষক শামছুদ্দিন বলেন, ‘চার দিন ধরে পানির নিচে খেত। আমরা কৃষকরা বাঁচবো কেমনে?’
বিলডোরা ইউনিয়নের মোফাজ্জল হক জানান, ‘আমার ৪০ শতক জমি গত দুদিন ধরে পানির নিচে। আজ (মঙ্গলবার) পানি বাড়ছে। তুলনামূলক উঁচু জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। মনে হয় এবার আর ফসল ঘরে তোলার বাউ নেই। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।’
হালুয়াঘাট কৃষি কর্মকর্তা মো.মাহবুবুর রহমান জানান, তারা নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করছেন। ভুবনকুড়া ও গাজীরভিটা ইউনিয়নে কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করছে। তবে নিচু এলাকা গুলিতে উজানের পানি প্রবেশ করছে। এতে আরও কিছু জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ধান ও ৭৫ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/এজে)

মন্তব্য করুন