নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১৮| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২৩
অ- অ+

গ্রেপ্তার করে হাত ও মুখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এবং অপরাধীর যেন বিচার নিশ্চিত হয়, সেজন্য ভুক্তভোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ড্রোন দিয়ে নজরদারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন রাশেদ খান।

অভিযোগ দাখিলের পর নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ড্রোন দিয়ে নজরদারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমদ পুলিশ নামধারী একজন সন্ত্রাসী। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনাকে কটূক্তির, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তারের পর তার দ্বারা আমি নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০১৮ সালের ১ জুলাই আমাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় আমি আক্রান্ত হই। এসময় ডিএমপিতে নিয়ে যাওয়ার পর পা দিয়ে রক্ত ঝরার কারণে আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে নিয়ে যাওয়ার পরপরই এডিসি ইশতিয়াক আহমদ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মা-বাপকে তুলে গালিগালাজ করে আর বলতে থাকে, আমার চোরের মতো চেহারা, আমি শেখ হাসিনাকে গালি দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এরপর চেয়ার থেকে উঠে এসে বুট দিয়ে আমার অন্ডকোষে লাথি মারে, আমি চিৎকার করে উঠলে, সে আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। আমি দিশেহারা হয়ে বারবার তার পা জড়িয়ে ধরতে যাই। এরপর সে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিতে বলে, মুখে গামছা ঢুকিয়ে মুখ বাঁধার নির্দেশনা দেয় একজন পুলিশকে। যাতে চিৎকার করতে না পারি। এরপর আমার হাত ও মুখ বেধে ফ্লোরে ফেলে পুলিশের মোটা লাঠি দিয়ে একটানা নির্যাতন করে। এসময় আমার আঙুল ফেটে ফ্লোরে রক্ত পড়ে এবং পুরো শরীর থেঁতলে যায়। আমি কয়েকবার সেন্সলেস হয়ে পড়ি। আমি তখন আর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার স্বাভাবিক সেন্স ছিল না। মনে হচ্ছিলো, আমি মারা যাচ্ছি। দুনিয়ার কোনো চিন্তা আমার মধ্যে ছিল না। মনে হচ্ছিলো আমি জাহান্নামে আছি। একটা পর্যায়ে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী ক্লান্ত হওয়ার পরে আমাকে মারা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। যতবার দাঁড়াতে যাচ্ছি, আমি ততবার পড়ে যাচ্ছি। আর পড়ে গেলেই চেয়ার থেকে বারবার উঠে এসে এই ইশতিয়াক আমাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। পুরোদমে ক্লান্ত হওয়ার আগে সে কোনোভাবেই অত্যাচার বন্ধ করে না। আমার সামনেই, ফ্লোরে পড়ে থাকা রক্ত তারা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। এতো অত্যাচারের পরেও আমাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।’

রাশেদ খান বলেন, ‘আমি চিকিৎসার অনেক আকুতি করেও কোনো চিকিৎসা পাইনি। আমাকে মাত্র কয়েকটি ব্যথার ট্যাবলেট দেয় তারা। সে সময়কার অত্যাচারের কারণে রিমান্ডে ও কারাগারে থাকাকালীন ঘুমাতে পারিনি। আমার পুরো মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। জেল থেকে বের হওয়ার পর চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তবে আমি আজও সুস্থ হতে পারিনি। ওই নির্যাতনের পর থেকে, প্রায়ই আমার পেশার লো হয়ে যায়, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এখনো পা-হাত ও শরীরের ব্যথায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি। জেল থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন আমি ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে উঠতাম। এই এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ আমার মতো অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করেছে। যেহেতু ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পুনরায় ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান। সে ২০১৮ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। আমি একজন ভুক্তভোগী হিসেবে মানুষরূপী এই হায়েনার উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এই অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি ও ভিডিও ধারণ করে। সুতরাং তার সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/জেবি/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইশরাককে দ্রুত শপথ না পড়ালে বৃহত্তর আন্দোলনের সতর্কতা সালাহউদ্দিনের
জামালপুরে দুই ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলো প্রশাসন, জরিমানা ২ লাখ
পুলিশের এসপি পদমর্যাদার ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি, ১০ জন পেলেন অতিরিক্ত ডিআইজির দায়িত্ব
ট্রাম্পের নতুন আইন, অন্য দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে লাগবে পাঁচ শতাংশ কর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা