সুন্দরবনের দুয়ারে পড়ল তিন মাসের তালা, দুশ্চিন্তায় ৫০ হাজার বনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা
  প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ১১:৩৬| আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১২:৫৬
অ- অ+

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণে আজ ১ জুন থেকে শুরু হয়েছে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা। বন বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ ধরা, গোলপাতা সংগ্রহ, মধু আহরণ এবং পর্যটন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস ও পারমিট বাতিল করা হয়েছে।

বিষয়টি সুন্দরবন-সংলগ্ন জনপদে গত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে স্থানীয় জেলে, মৌয়াল, বাওয়ালি, ট্রলারচালক ও গাইডদের অবহিত করা হয়েছে।

তবে কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার বনজীবী ও তাদের পরিবার।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকত। ২০২২ সাল থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট করা হয়।

বন বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবনের মধ্যে ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার জলভাগ রয়েছে, যা মোট আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এই জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাসই এসব জলজ প্রাণীর প্রজনন মৌসুম। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এই সময়টিতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সারা বছর হাজার হাজার বনজীবী সুন্দরবন থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই সুন্দরবনের বিশ্রাম দেওয়ার মাধ্যমে সেখানকার প্রকৃতি-প্রতিবেশসহ জীবপ্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রতিবছর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি রক্ষা পাবে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে যেসব বনজীবী পুরোপুরি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল তারা পড়েছেন চরম দুর্দশায়। জেলে, মৌয়াল, বাওয়ালি থেকে শুরু করে ট্রলারচালক ও পর্যটন গাইড পর্যন্ত সবাই এখন বেকার।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের ট্রলার সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম বলেন, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত আমরা ট্রলারচালক, গাইডসহ সবাই কাজ হারাই। কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান নেই, সরকারিভাবেও কোনো সহায়তা মেলে না। আমরা সরকারিভাবে খাদ্য সহযোগিতা দাবি করছি।

শ্যামনগরের জেলে লুৎফর রহমান বলেন, সমুদ্রেও এখন ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলে। তখন সরকার আমাদের চাল দেয়। কিন্তু বনের নিষেধাজ্ঞায় আমরা কিছুই পাই না। এই সময়ে পরিবার নিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বনজীবীদের খাদ্য সহায়তার বিষয়ে সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বেকার জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা চেয়ে দুই বছর আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মৎস্য মন্ত্রণালয় বনজীবীদের তালিকাও সংগ্রহ করেছে। আমরা আশাবাদী, প্রকৃত বনজীবীরা কিছুটা হলেও সহায়তা পাবেন।

পরিবেশবাদীদের মতে, জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ অবশ্যই সময়োপযোগী। তবে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের আগে যাদের জীবিকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না করা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

(ঢাকা টাইমস/০১জুন/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নারায়ণগঞ্জে ৫ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ ভারতীয় পণ্য জব্দ 
ডিসেম্বরে রূপপুরের বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে: অর্থ উপদেষ্টা
লায়ন্স ৩১৫বি৩ দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর হলেন ডা. মাজহারুল ইসলাম
দ্বিতীয় স্ত্রীর করা ‘ভ্রূণ হত্যা’ মামলায় জামিন পেলেন খুলনা টাইগার্স মালিক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা