বিশ্বকাপের স্বাদ পাননি যেসব কিংবদন্তি

ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজন বিশ্বকাপ৷ সেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতে চাননি এমন ফুটবলার বোধহয় কেউ নেই৷ কিন্তু চাইলেই তো আর বিশ্বকাপ জেতা যায় না! সঙ্গে ভাগ্য ও সেরা একটি টিম লাগে। প্রতিভা, স্কিল এবং অনবদ্য ফুটবল খেলা সত্ত্বেও এমন অনেক ফুটবলারই রয়েছেন ভাগ্যদেবী যাঁদের বিশ্বকাপের গৌরব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন৷ আসুন দেখে নেওয়া যাক কারা রয়েছেন এই তালিকায়৷
এই তালিকার প্রথমে যিনি রয়েছেন তিনি অবশ্য কিংবদন্তি গোলকিপার৷ সর্বকালের সেরা গোলকিপার বলেই এঁকে মনে রেখেছে ফুটবলবিশ্ব৷ সোভিয়েত রাশিয়ার গোলকিপার হলেন লেভ ইয়াসিন৷ বিশ্বের একমাত্র গোলকিপার যিনি ১৯৬৩ সালে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জিতেছেন৷
স্পিডের জন্য ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ (ব্ল্যাক স্পাইডার) নামে পরিচিত এই গোলকিপার ১৩ বছর দেশের হয়ে খেলেছেন৷
গোলকিপার হিসেবে ফুটবলের প্রায় সব পুরস্কার দিয়ে নিজের ওয়ার্ড্রোব সাজালেও বঞ্চিত থেকেছেন বিশ্বকাপ থেকে৷
কিংবদন্তি ফুটবলারদের তালিকায় অন্যতম বড় নাম উত্তর আয়ারল্যান্ডের জর্জ বেস্ট৷ ১৯৬৮ ব্যালন ডি’অর জেতেন এই কিংবদন্তি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার৷ ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ফুটবল বিশ্বকে একাধিক স্বপ্নের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন এই ফুটবলার৷ কিন্তু দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি বেস্ট৷
ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত ম্যারাডোনার আগে ফুটবলবিশ্ব আলোড়ন তুলেছিলেন যে কিংবদন্তি ফুটবলার তাঁর নাম ইয়োহান ক্রুয়েফ৷ নেদারল্যান্ডসের সর্বকালের সেরা এই ফরোয়ার্ড তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন৷ ‘ক্রুয়েফ টার্ন’ নামে ফুটবল সার্কিটে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে এই কিংবদন্তি ফুটবলারের একটি মুভ৷ কিন্তু বিশ্বকাপের স্বাদ পাননি এই কিংবদন্তি ডাচ ফুটবলারও৷
১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫ টানা তিনবার ব্যালন ডি’অর জয়ের হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি৷ সর্বকালের সেরা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের একজন ইনি৷ ‘দ্য কিং’ নামে ফুটবল সার্কিটে পরিচিত এই কিংবদন্তিও কিন্তু বাদ থেকেছেন বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব থেকে৷ ফ্রান্সের হয়ে প্রায় ২০ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে অনেক চেষ্টা করেও ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷
এই তালিকার শেষ দুটি নাম যাদের তাঁদের নিয়ে বর্তমান ফুটবল বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত৷ এঁরা যদিও এখনও অবসর ঘোষণা করেননি৷ তবে ফুটবলবিশ্বে প্রায় সমস্ত রেকর্ড এবং পুরস্কার এঁদের সামনে মাথা নত করলেও বিশ্বকাপ এদের থেকে দূরে রয়েছে এখনও৷ এই তালিকার শেষ দুটি নাম হলো জীবন্ত কিংবদন্তির আখ্যা পাওয়া আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিও মেসি এবং পর্তুগাল ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
৩৩ বছর বয়সি পর্তুগাল ফরোয়ার্ড জিতেছেন পাঁচবার ব্যালন ডি’অর৷ পাঁচবার ইউরোপ সেরার খেতাবও রয়েছে সিআর সেভেনের ঝুলিতে৷ জাতীয় ও ক্লাব ফুটবল মিলে ৫০০-র বেশি গোল রয়েছে রোনালদোর ঝুলিতে। কিন্তু বিশ্বকাপ এখনও অধরা এই কিংবদন্তির৷ নক-আউটে উরুগুয়ের কাছে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷ সেই সঙ্গে এবারের মত শেষ হয়েছে রোনালদোর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন৷ ২০১৮ আগে আরও তিনবার বিশ্বকাপের আসরে নেমেও খালি হাতেই ফিরেছেন সিআর সেভেন৷
ভক্তদের চোখে তিনি ফুটবলের ‘ঈশ্বর’৷ ফুটবলবিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে সেরা ফুটবল প্রতিভা বলে৷ রেকর্ড এবং পুরস্কারের ঊর্ধ্বে নিয়ে এসেছেন নিজেকে৷ পাঁচবার ব্যালন ডি’অর, গোল্ডেল বুট, গোল্ডন বলসহ বিশ্বফুটবলের প্রায় সমস্ত সম্মান তাঁর ওয়াড্রোবে শোভা পায়৷ তিনি লিওনেল আন্দ্রেয়েস্তা মেসি। কিন্তু ২০০৬ থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে চারবার বিশ্বকাপ মঞ্চে উপস্থিত হয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মেসিকে৷ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে হেরে বিশ্বকাপ থেক বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা৷ সেই সঙ্গেই মেসির বিশ্বকাপ স্পর্শ করার স্বপ্ন ভাঙল আরও একবার৷
যদিও মেসি এবং রোনালদো দু’জনের কেউই অবসর ঘোষণা করেননি৷ কিন্তু এই দুই কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড ৩০ বছর পার করেছেন৷ তাই ২০২০ কাতার বিশ্বকাপে এই দুই ফুটবল জাদুকরের খেলা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে৷ যদি সিআর সেভেন কিংবা এলএম টেন আর বিশ্বকাপের আসরে না-নামেন তাহলে পাকাপাকিভাবে বঞ্চিতদের তালিকায় নাম লেখাবেন। সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকাটাইমস/০৫জুলাই/ইএস

মন্তব্য করুন