আপনার ফোনের অপেক্ষায় বসে আছি খোকন ভাই

সোমবার রাতে খোকন ভাইকে কল করি রাত ১০টার দিকে। রিসিভ করলেন ভাবি। অসুস্থতার কথা আগে থেকে জেনেই কল করেছিলাম। ভাবি বললেন জ্বর আর কাশি। ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলোম। ভাবিকে বললাম মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। ভাবি বললেন, আপনার ভাইকে একটু বলেন। খোকন ভাই বললেন কাশিটা একটু বেশি। অল্প শ্বাসকষ্ট। এখানকার ডাক্তারদের কাছ থেকে শেখা কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দিলাম আর অনুরোধ করলাম সেগুলো নিয়মিত করার জন্য। শেষে খোকন ভাই বললেন ‘কাল কল দিবো তুহিন’। তারপর ভাবির সাথে আরও প্রায় ৩০মিনিট কথা বলেছি। কিভাবে গরম পানির ভাপ নিতে হবে সেটা বললাম ভাবিকে। ভাবির শেষ কথা ছিল, ‘কাল আবার একটু কল দিয়ে আপনার ভাইকে একটু সাহস দিয়েন।’
ঢাকায় সাংবাদিকতা করার সময় একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি ফ্লাটে প্রায় চারবছর ছিলাম আমি আর খোকন ভাই। সম্পর্কটা এতই গভীর ছিল যে দিনের বেলা আমাদের দু’জনেরই ফ্লাটের দরজা বেশিরভাগ সময় খোলা থাকতো অবাধ যাতায়াতের জন্য। আমাদের সম্পর্কটা ছিল আপন ভাইয়ের মতো। আমেরিকা চলে আসার পর কথা কম হলেও সেই সম্পর্ক অটুট ছিল। আমার মেয়ে আর খোকন ভাইয়ের মেয়ে নাফিসা একই বয়সের। দু’জনে সেই ছোটবেলা থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটু আগে নাফিসা আমার মেয়েকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে “মাই ফাদার ইজ নো মোর”।
মৃত্যুর আগে নাফিসা তার বাবার মুখটা দেখতে পারেনি খালার বাসায় থাকার কারণে। খোকন ভাইও দেখে যেতে পারলো না তার কলিজার টুকরা মেয়েটিকে। কি সান্ত্বনা দেব ছোট্ট নাফিসাকে? কি সান্ত্বনা দেব ভাবিকে? আসলেই কোনো সান্ত্বনা দেয়া যায়? আমি তো নিজেকেই বোঝাতে পারছি না। আপনি নেই এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই আপনার ফোনের অপেক্ষায় আছি খোকন ভাই। আমাকে ফোন না করেই এভাবে চলে গেলেন...।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দ্য নিউইয়র্ক মেইল।
মন্তব্য করুন