এলোমেলো মনের উদাসী কথা

নারীর মন বড় বিচিত্র। নারীর মন নিয়ে কালে কালে অনেক কথা, কিছু রূপকথা প্রচলিত আছে। বাস্তবেই কী নারীর মন বিচিত্র? নাকি তা বৈচিত্র্যময়? স্বভাবগতভাবে নারীরা নিজের মনের কথা প্রকাশে এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে বা রাখতে পছন্দ করে বা বাধ্য হয়েই তা করে। এ সমাজ নারীর মনের কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আর ঠিক এই কারণেই যে সব নারী তাদের প্রাণচাঞ্চল্যকে অবদমন না করে মনকে প্রকাশে প্রস্তুত হয় তাদের ওপরে নেমে আসে সমাজের মুগুর।
মন কেবল পুরুষের আছে আর তা প্রকাশের স্বাধীনতাও কেবল তাকেই দিয়েছে। নারীদের মন থাকতে নেই, থাকলেও তাকে কখনো জাগতে দিতে নেই, ভুলক্রমে জেগে গেলেও তাকে মেলে ধরতে নেই।
একজন নারীরও কখনো ইচ্ছে করে একলা থাকতে, কখনো ইচ্ছে করে প্রাণখুলে হাসতে, গল্প করতে, ভালোবাসতে, ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি বলে জড়িয়ে ধরতে। একজন নারীরও রয়েছে অনুভূতি। সে অনুভূতি প্রকাশের একচ্ছত্র অধিকার কেন কেবল পুরুষের হাতেই জিম্মি থাকবে?
একজন পুরুষ ইচ্ছে করলেই একজন নারীর হাত ধরতে পারে, তাকে জড়িয়ে ধরতে পারে, চুমু খেতে পারে। সে কথা জানাজানি হলে কেবল দোষ আসে অবলা নারীটির দিকেই। ভাবখানা যেন নারী তুমি না এগোলে তো আর পুরুষের স্খলনের সুযোগ থাকে না। পুরুষরা সব সাধু সন্ন্যাসী আর নারীরা হচ্ছে ধ্যানভঙ্গকারী। আবার ছেড়ে দেওয়ার অধিকারও কেবল একজন পুরুষেরই আছে। ভালোবাসবে কিন্তু দায়িত্ব নিবে না। নারী যেন তাদের কাছে শখ মিটানোর যন্ত্র। কিছুদিন শখ হলো ভালোবাসলাম আবার শখ হলো ছেড়ে দিলাম। পুরুষের মন বলে কথা, সে কখনো নারীর মনের কথা ভেবে দেখার চিন্তাও করে না।
সংসারে জোয়াল টেনে নিয়ে যাওয়াটাও নারীর অবশ্য কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। একজন নারীকে সংসারের আর্থিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়, হেঁসেলের ব্যবস্থাপনা সুচারুরূপে পালন করতে হয়, সন্তানের যাবতীয় আবদার রক্ষায় কর্মঠ কর্মী হতে হয়। এই যে বহুরূপে আবির্ভূত নারী তার খবর কে রাখে? তার ভালোমন্দের খবর কয়জন জিজ্ঞেস করে? তার মানে তার নিজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও তাকেই পালন করতে হয়।
অথচ একজন নারীরও ইচ্ছে করে কেউ তাকে নিয়ে ভাবুক, তার ভালোলাগার বিষয়গুলো কেউ পূরণ করুক, বিশেষ দিনে কেউ তাকে কিছু স্পেশাল ভাববে। বৈচিত্র্যময় নারীর এ মনই বড় শত্রু হয়ে যায় যদি তা পেতে চায়। নারীর আবার চাওয়া কী? অত পাই পাই করা স্বভাব নাকি অলুক্ষণে লক্ষণ।
লেখক: কলামিস্ট
ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এসকেএস

মন্তব্য করুন