ফখরুদ্দীন আহমেদ কোথায়, কী করছেন?

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৯| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২১, ১৯:০৯
অ- অ+

হঠাৎ করে দেশের ক্ষমতার মসনদে বসে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়েছেন দুই বছর। তার আমলে গ্রেপ্তার হন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। দুই দলের প্রভাবশালী নেতাদের একে একে কারাগারে রেখেই ক্ষ্যান্ত হয়নি সে সময়কার সরকার। সেই দিনগুলোর কথা ভেবে এখনো শিউরে ওঠেন রাজনীতিবিদরা। এক-এগারোর সেই নায়ক ফখরুদ্দীন আহমেদ এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, সেটা জানার আগ্রহ সবার।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা হারানোর পর ওই বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ফখরুদ্দীন আহমেদ। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি বিদেশে রয়েছেন। এরমধ্যে একবারও দেশে আসেননি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার তিনি সৌদি আরবে হজ করতে গিয়েছিলেন। গত বছর তাকে অবশ্য ভারতের কলকাতায় দেখা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছুদিন সরকারি বিশেষ নিরাপত্তায় তিনি দেশেই ছিলেন। এক-এগারোর কর্মকাণ্ডের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে গঠিত সংসদীয় কমিটি জেরার জন্য তলব করছে মর্মে খবর প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে ফখরুদ্দিন সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আগে থেকেই ফখরুদ্দীন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের পটোম্যাকে দুটি বাড়ির মালিক। একটি বাড়িতে এখন তিনি ও তার স্ত্রী নীনা আহমেদ থাকছেন। সেখানেই অবসর জীবন যাপন করছেন। অন্য বাড়িতে থাকে তার মেয়ের পরিবার।

জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে এখনো তিনি পেনশন ভোগ করছেন। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করছেন ড. ফখরুদ্দীন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে কর্মরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানা যায়, মাঝেমধ্যে সেখানকার সামাজিক অনুষ্ঠানে ফখরুদ্দীন আহমেদকে দেখা যায়। তবে সেটা খুবই কম। কিছুদিন আগে তার ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ হয়েছে।

কিছুদিন আগেও ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক সরকার কবীরের ছেলের জানাজায় ফখরুদ্দীনকে অংশ নিতে দেখেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। অবশ্য সেখানে বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করলে জানাজা শেষে দ্রুত তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। বিভিন্ন সময় তাকে বাজার ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত সাংবাদিকরা। তাছাড়া বন্ধু-বান্ধব ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ফখরুদ্দীনকে প্রায়ই দেখা যায়।

বিশেষ করে গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি বইমেলায় তাকে দেখা গেছে। ফখরুদ্দীনের অর্থনীতিবিদ ছেলে করপোরেট অফিসে চাকরি করেন বলে তার পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে। কয়েক বছর আগে তার আরেক ছেলে আত্মহত্যা করেছেন।

কে এই ফখরুদ্দীন আহমেদ

১৯৪০ সালের ১ মে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের রব নগরকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। তার বাবার নাম ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফখরুদ্দীন আহমেদ অর্থনীতি বিষয়ে ১৯৬০ এবং ১৯৬১ সালে যথাক্রমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয়টিতেই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাসাচুয়েটসের উইলিয়ামস কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবন সম্পন্নের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।

এরপর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের কর্মকমিশনে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ কর্মকমিশনে চাকরি করেন। সে বছরই ফখরুদ্দীন আহমেদ বিশ্বব্যাংকে যোগ দেন।

২০০১ সালের ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাংকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পি.কে.এস.এফ) কর্মরত ছিলেন।

যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলেন

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীন আহমেদকে নিয়োগ করা হয়।

জানা গেছে, গভীর রাতে তাকে (ফখরুদ্দীন) ফোন করে ঘুম থেকে জাগানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চান। আধঘণ্টা পর ফিরতি ফোনে সম্মতি জানান।

ফখরুদ্দীন আহমেদ ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হয়। তিনি দুই বছর কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান ছিলেন। সে সময় দেশের প্রায় ১৬০ জন রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করা হয়।

আলোচিত এক-এগারো

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সংঘটিত রাজনৈতিক পরিবর্তন ‘এক-এগারো’ নামে প্রচার লাভ করে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ঘটনাবহুল সেই দিনটির ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। সেনাবাহিনীর সমর্থনে ওই সময় গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ। তবে ক্ষমতার মূল কেন্দ্রে ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ।

কথা ছিল, ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুততম সময়ে দেশবাসীকে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার দেবে। কিন্তু, তারা উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের চেষ্টা শুরুর অভিযোগ ওঠে।

‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোররাতে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত হন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া।

একটি সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে সেনা সমর্থিত সরকারের ওপর চাপও বাড়ছিল। অবশেষে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সব দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার মাধ্যমে দুই বছর পর দেশে ফিরে আসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এসএস/বিইউ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঋণ নিয়ে ঋণ শোধ করার মতো বাজেট: আমিনুল হক 
ঢাকা-লন্ডন সম্পর্ক আরও গভীর করতে যুক্তরাজ্য সফর করবেন প্রধান উপদেষ্টা
চাঁদপুরে দীপু মনিসহ ৪৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
হামজার অভিষেক গোল, ভুটানকে হারাল বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা