বগুড়ায় এই প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৬

বগুড়ার মিফতাহুল জান্নাত হিরা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তিনি। এরপরেও জীবনের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। জান্নাত হিরা প্রথম কোনো প্রতিবন্ধী নারী যিনি বগুড়ায় স্বাধীনতার পর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে মিফতাহুল জান্নাত হিরা গত মঙ্গলবার যোগদান করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজমল হোসেনসহ অন্য শিক্ষকরা মিফতাহুল জান্নাত হিরাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং তাকে শুভেচ্ছা উপহার দেন।

জান্নাত হিরা বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পশ্চিমপাড়ার আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। তিনি ২০১৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে অনার্স পাস করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে অনার্স পাস করায় ২০২১ সালে জাতীয়ভাবে জয়ীতা নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরস্কৃত করেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পশ্চিমপাড়ার আব্দুস সাত্তার ও নূর জাহান বেগম দম্পতির চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট হিরা। তার বড় আরো বোন দুই লাভলী খাতুন ও রেশমা খাতুন জন্মের পর থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখে না দেখলেও কারো উপর নির্ভরশীল হননি তারা। লাভলী খাতুন স্নাতক পাস করে একটি প্রকাশনী সংস্থায় ব্রেইল পদ্ধতির বই লিখে দেন।

মিফতাহুল জান্নাত হিরা জানান, ২০১২ সালে গাজীপুরের সালনা নাছির উদ্দিন মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন।

২০১৪ সালে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন জিপিএ-৫ পেয়ে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। অনার্স পাস করার পর একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছেন হিরা। ২০২০ সালে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির আবেদন করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে বিশেষ ব্যবস্থায় (শ্রুতি লেখক নিয়ে) লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উর্ত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত তার লেখাপড়ায় এবিসি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা সহায়তা করলেও উচ্চ শিক্ষায় তারা এগিয়ে আসেনি। পারিবারিক উদ্যোগেই তিনি এইচএসসি ও অনার্স পাস করে এখন মাস্টার্সে অধ্যায়নরত।

চাকরি পাওয়ার পর অভিব্যক্তি জানতে চাইলে মিফতাহুল জান্নাত হিরা বলেন, শুধুমাত্র সহায়তার অভাবে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের যদি যথাযথ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যায় তাহলে অনেকেই স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হতে পারে।

তিনি এই চাকরি পাওয়ায় অনেক আনন্দিত উল্লেখ করে বলেন, দৃষ্টিহীন মানুষ বলে যদি কোন অবহেলার শিকার না হই- তাহলে শিক্ষকতা করা সম্ভব। তিনি চাকরি ক্ষেত্রে সবার সহযোগী মনোভাব কামনা করেন।

বগুড়ার সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাভেদ আক্তার জানান, বগুড়া জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে মিফতাহুল জান্নাত হিরাই একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক। তিনি গত মঙ্গলবার সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন।

বগুড়া জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম কাওসার রহমান বলেন, বগুড়া জেলায় সরকারি কোন অফিসে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কর্মকর্তা-কর্মচারী এতদিন ছিলেন না। মিফতাহুল জান্নাত হিরা নামে একজন নারী এই প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :