চুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার: দামে বেশি মানে কম

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ২০২৩ সালের ২১ মে উদ্বোধন করা হয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়া। উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ খাবার-দাবারের জন্য ক্যাফেটেরিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন হওয়ার পর থেকে এর ওপর নির্ভরতা যেনো আরও বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের।
উদ্বোধনের প্রায়ই ৮ মাস পার হওয়ার পরও ক্যাফেটেরিয়ার সফলতা কতটুকু সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ সেবা প্রদান করতে পারছে? দাম ও খাবারের মান নিয়ে কী শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট? অন্যান্য সেবাগুলোরই বা কী অবস্থা?
ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ আবর্তের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ফেরদৌস আলভী বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান দামের তুলনায় খুবই নিম্নমানের। এখানের যে কোনো খাবারের দাম দেশের আরেকটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি। একই রকম কোয়ালিটির খাবারের দাম দেড় গুণেরও বেশি এখানে। অথচ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় একই রকম আয়ের পরিবার থেকে এসেছে। এটা মাথায় রেখে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মূল্য কমানো উচিৎ। আর যদি নিতান্তই তাদের মনে হয় খাবারের দাম কমালে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না, সেই যুক্তিটাও খাটবে না, কারণ, খাবারের মান দামের তুলনায় অর্ধেকের কাতারে থাকবে।
চুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চট্টগ্রামের স্থানীয়। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে খাবারদাবার করলেও শহরের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের জন্যে ক্যাফেটেরিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনই এক শিক্ষার্থী পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত শাফকাতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, খাবারের দাম ভার্সিটি হিসেবে অনেক বেশি, রেস্টুরেন্টের দামের সঙ্গে এখানে কোনো পার্থক্য নাই, খাবারের মানও সাদামাটা। আর্থিক সমস্যা ও খাবারের মানের কারণে অনেক বন্ধুকে খাওয়াদাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখেছি। দামটা আরও ধরাছোঁয়ার মধ্যে হওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া টিএসসিতে চুয়েট ওয়াইফাই পাওয়া যায় না। তাদের আলাদা কোনো সার্ভিস প্রোভাইডারো নেই।
চুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মেনুর দিকে তাকালে দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীকে দুপুরে সামান্য ঘন ডাল দিয়ে ভাত খেতে হলে খরচ করতে হবে ৪৫ টাকা। সঙ্গে যদি কেউ মুরগি খেতে চান তাহলে গুণতে হবে আরও ৭০ টাকা। মুরগি ছাড়াও রয়েছে রুই মাছ ৬০ টাকা, গরু ১৩০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ১৩০ টাকা। খাবার দাবারের পর যদি একটু মিষ্টি খেতে মন চায় তাও রক্ষে নেই। মিষ্টি দই খেতে হলে খরচ করতে হবে প্রায় ৩০ টাকা। ফালুদার দাম ৮০ টাকা।
ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির দিকে তাকালে দামটা কমানো কষ্টকর। খাবারের মানের দিকটায় আরও নজর দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কমিটি রয়েছে। অনেক সময় অনেক সমস্যা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এমন সমস্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না লিখে আমাদের কাছে আসলে সেটা সমাধান করতে আরও সুবিধা হবে। আমরা এখন ইমেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রেখেছি।
এক ও দুই নাম্বার ক্যান্টিনের অনুপস্থিতি প্রতিযোগিতামূলক সেবা মন্থর করছে কিনা (মনোপলি) সে ব্যাপারে তিনি জানান, এক ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন রাখার সুযোগ ছিল না। আমরা তিন নাম্বার ক্যান্টিনের দিকে নজর দিচ্ছি। কিভাবে এটিকে আরও উন্নত ও মানসম্মত করা যায়।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে চুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, বাজারের উঠতি মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন । আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সকল মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত। এর থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।
সিএসই বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহী আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের চুয়েটের ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের দাম অনেক বেশি। তবে সেই তুলনায় স্বাদ-পুষ্টিমান একদমই কম। যখন এগুলা চালু হয় তখন যে মানের ছিল সেই মানের আস্তে আস্তে অবনতি হচ্ছে। ক্যাম্পাসের ভিতরে টিএসসি-ক্যাফেটেরিয়ার এক চেটিয়া ব্যবসা এর মূল কারণ। তাছাড়া ওয়াশরুম গুলোর অবস্থাও দিন দিন অবনত হচ্ছে।
উল্লেখ্য: যে ক্যাফেটেরিয়ার মেনু আইটেমের অধিকাংশ খাবারই নিয়মিত পাওয়া যায় না এই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
(ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন