আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ২১:০৯| আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ২২:০১
অ- অ+

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এবারের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে সোমবার বিকাল ৩ টায় জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।

এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং আর্থিক শৃঙ্খলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পকে সহজতর করা, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এফডিআই আকর্ষণ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, কর পরিপালন ঘাটতি কমানো, ভ্যাটের হিসাব ব্যবস্থা সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়া হবে।

এছাড়াও, ভ্যাট আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পূরক শুল্ক হারকে যৌক্তিক করতে সংশ্লিষ্ট আইনের কিছু বিধান সরলীকরণের সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবার সাত হাজার কোটি টাকা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক একীকরণের ওপর সরকারের অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরও বাস্তবায়নযোগ্য ও দক্ষ আর্থিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০২৫-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়নের সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় বিবেচনা করেছে। তাই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট হবে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। এতে বাস্তবায়নযোগ্য পদ্ধতিও উল্লেখ থাকবে।

তিনি বলেন, আমি এই বাজেট (২০২৫-২৬ অর্থবছর) ছোট বলব না, তবে এটি অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য ও সময়োপযোগী হবে। মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, রাজস্ব আহরণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে বলে এটি সময়োপযোগী হবে। আমরা এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করছি এবং এইভাবে বাজেটকে বাস্তবমুখী করে তুলছি।

এবারের বাজেটের সামগ্রিক আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৭ শতাংশ কম। উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হবে। আর রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হবে।

রাজস্ব নীতিতে মুদ্রানীতির সঙ্গে আরও কঠোর সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্যদিকে বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন এবং টাস্কফোর্স রিপোর্টের সুপারিশ প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশের সিংহভাগ অর্থ বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করা হতে পারে। শুধু বেতন-ভাতা ৮২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতাও চালু করা হতে পারে।

ভর্তুকি ব্যয় মোট ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে সুদ পরিশোধ রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ হতে পারে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা এবং জিডিপির ৩.৬২ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৫.৫ শতাংশের সম্ভাব্য মাঝারি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বছরের জন্য সংশোধিত ৫.২৫ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি।

বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে এবং সরকার এটিকে প্রায় ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রাখবে।

নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর ওপর আর্থিক চাপ কমাতে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সম্প্রসারণ, সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কম। তবে তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আশ্বাস দিয়েছেন, আসন্ন বাজেট ব্যবসা-বান্ধব হবে এবং বিনিয়োগ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত করনীতি প্রবর্তন করা হবে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেশি।

ঋণ পরিষেবা, খাদ্য ভর্তুকি ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের জন্য প্রধান বরাদ্দ রেখে অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

অনুন্নয়ন বাজেট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি।

সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও করছে। এছাড়াও, কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকিতে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

আগামী বাজেটে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস ও স্বল্পোন্নত ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্তরে উন্নীতকরণের প্রয়োজনীয়তার সাথে করনীতিগুলোকে সামঞ্জস্য করার পদক্ষেপও দেখা যেতে পারে।

বাজেটে সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। এমন কোনো ব্যয় থাকবে না, যা সাময়িকভাবে জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যতের বাজেটের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেবে।

উন্নয়ন বাজেটে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না এবং মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়া কোনো নতুন মেগা প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে না।

মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি জাপানি ঋণে অর্থায়ন করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদি প্রকৃতির। ঋণের বোঝা বৃদ্ধি এড়াতে কোনো স্বল্পমেয়াদি বা উচ্চ-সুদের ঋণ নেওয়া হচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/০১মে/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পোস্ট অফিসে ১ লক্ষ টাকা জমা রাখলে মাসে কত টাকা মুনাফা পাবেন?
কৃষ্ণচূড়ার দিনে
কোরবানি দিতে না পারলে কী করবেন: ইসলাম কী বলে?
দেশে বৃষ্টি ঝরবে আরও, দুপুরের মধ্যে আট জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা