কোরবানি দিতে না পারলে কী করবেন: ইসলাম কী বলে?

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশের এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনটির অন্যতম প্রধান ইবাদত হলো কোরবানি। এটি শুধুমাত্র একটি প্রথা নয়, বরং হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর মহান ত্যাগের স্মৃতি রক্ষার সুন্নাত।
তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—যদি আর্থিক সংকটের কারণে কেউ কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে কী করবেন? এতে কি কোনো গুনাহ হবে? ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি বলছে?
সাধারণত কোরবানি ইসলামে একটি উত্তম সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কোরবানি দিয়েছেন এবং সাহাবিরাও তাঁর এই সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন। বিধান হিসেবে বলা যায়, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, সাবালক মুসলিম যদি কোরবানি ঈদের তিন দিন (১০ জিলহজ সকাল থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত) জাকাত পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক) থাকেন বা হন, তাঁর জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব।
এমন না হলে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও কোরবানি বাধ্যতামূলক নয়।
যদি সম্ভব হয়, আরাফার দিন (জিলহজের নবম দিন) রোজা রাখুন। এটি বিগত ও আগামী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে কাজ করে (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯৮৮)
ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ওপর তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপায় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)। যদি কেউ আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে তাঁর ওপর কোনো গুনাহ বা দায় নেই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো; আর আমি যা আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৩৩৭)। এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে ইসলামে সাধ্যের মধ্যে আমল করাই যথেষ্ট।
কোনো কারণে কোরবানি দিতে না পারলে
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোয় ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তাঁর ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিলেন, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি, তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো; আর আমি যা আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৩৩৭)
যদি আপনি এ বছর কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলেও পবিত্র ঈদুল আজহার এই পবিত্র সময়ে আপনি অন্যান্য উপায়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে পারেন।
যেমন ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে খুতবা শুনুন এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হোন। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ বেশি বেশি পড়ুন। এটি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সহজ উপায়। যদি সম্ভব হয়, আরাফার দিন (জিলহজের নবম দিন) রোজা রাখুন। এটি বিগত ও আগামী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে কাজ করে (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯৮৮)
আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও ছোট পরিমাণে দান করা যায়। এমনকি একটি হাসি বা সদাচরণও সদকার অংশ। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করুন, শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। এটি ঈদের আনন্দকে আরও গভীর করে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং নিজের আমলের উন্নতির জন্য দোয়া করুন। তওবা হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে।
যেমন ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে খুতবা শুনুন এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হোন। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ বেশি বেশি পড়ুন। এটি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সহজ উপায়।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
তাই আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কোরবানি দিতে না পারলেও আপনি অন্যান্য সৎকর্মের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারেন।
কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ হলেও এটি শুধুমাত্র সামর্থ্যবানদের জন্যই ওয়াজিব। ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই যে, এটি কারো ওপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপায় না, যা তার পক্ষে বহন করা অসম্ভব। তাই যদি আপনি এ বছর কোরবানি না করতে পারেন, তাহলে দুশ্চিন্তা নয়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অন্যান্য ভালো কাজ করুন, নিয়ত ঠিক রাখুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অবশ্যই তার বান্দার নিয়ত ও আমল গ্রহণ করবেন।
(ঢাকাটাইমস/৩ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন