ঈদুল আজহার প্রস্তুতি: তাকবিরে তাশরিক কখন থেকে কীভাবে পড়তে হয়

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ০৯:৪১| আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১১:৫২
অ- অ+

পবিত্র ঈদুল আজহা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের দিন। এই দিনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন, যা হজের অন্যতম শিক্ষা ও তাকওয়ার প্রকাশ। কিন্তু শুধু পশু কোরবানি নয়, ঈদুল আজহার প্রস্তুতিতে কিছু বিশেষ আমলও রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাকবিরে তাশরিক বলা। এটি এমন একটি ছোট্ট আমল, যা ঈমানী অনুভূতিকে জাগ্রত করে এবং ঈদের পরিবেশকে আরও ইবাদতমুখর করে তোলে। জিলহজ মাসে মহান আল্লাহর মহিমা ঘোষণার জন্য তাকবিরে তাশরিক জিকির করার কথা কোরআন-হাদিসে এসেছে।

তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ অর্থ: ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।’

তাকবিরে তাশরিক বলা হয় ৯ জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ আছর পর্যন্ত, প্রতিটি ফরজ নামাজের পর একবার আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব ঘোষণা করা। ইসলামি শরিয়তে তাকবিরে তাশরিক প্রত্যেক মুসলমান, পুরুষ ও নারী—সবার জন্য ওয়াজিব। প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের—সবার ওপর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার: ২/১৮০)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ: ২৮)। বিখ্যাত সাহাবি রইসুল মুফাস্সিরিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে। (সহিহ্ বুখারি)

তাশরিকের দিনগুলোতে প্রতি ফরজ নামাজের পর পুরুষদের ওপর উচ্চ স্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। আর নারীরা নিচু স্বরে পড়বেন, যাতে নিজে শোনেন। (ফাতাওয়া শামি: ২ / ১৭৮)

তাকবিরে তাশরিকের বিধান

জামাতে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব তাকবির বলতে ভুলে গেলে ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে মুক্তাদিদের তাকবির বলা উচিত। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১ / ১৫২)। প্রতি ফরজ নামাজের সালামের পরপরই কোনো কথাবার্তা বা নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগেই তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। (রদ্দুল মুহতার ২ / ১৮০)। নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে—পুরুষেরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে এবং নারীরা নামাজের স্থান ত্যাগ করার আগে তা মনে পড়লে তাকবির আদায় করে নিতে হবে। আর যদি মসজিদ বা নামাজের স্থান থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে এই ওয়াজিব ছুটে যাবে। এই ওয়াজিবের কোনো কাজা নেই এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে ওই ব্যক্তি গুনাহগার হবেন। (মাবসুত সারাখসি ২ / ৪৫)

কোনো ব্যক্তির যদি জামায়াতে নামাজ আদায়কালে প্রথম দিকে এক বা একাধিক রাকাত ছুটে যায়, তাহলে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নিজের নামাজ আদায় করার পর তাকবিরে তাশরিক বলবেন। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১ / ১৫২)

তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত

তাকবিরে তাশরিক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘(আইয়ামে তাশরিকের) এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর পথে লড়াইও কি (এর চেয়ে উত্তম) নয়? নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে লড়াইও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জানমালের ঝুঁকি নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় লড়াইয়ে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না। (সহিহ্ বুখারি: ৯৬৯)

তাকবিরে তাশরিক কখন পড়বেন

ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের, নারী হোক বা পুরুষ—সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার: ২ / ১৮০)

৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা আবশ্যক। এমনকি ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে—এ কাজা ওই দিনগুলোতে আদায় করলে সে কাজা নামাজের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়বে। (ফাতাওয়া শামি: ২ / ১৭৮)

তাকবিরে তাশরিক কতবার পড়তে হয়

তাকবিরে তাশরিক একবার পড়া ওয়াজিব। তিনবার বলার কোনো ভিত্তি নেই। সুন্নত মনে করে তিনবার পড়লে মাকরুহ হবে। (ফাতাওয়া নাওয়াজেল: ১৪ / ৫৯৪)

মুসলিম উম্মাহর করণীয়

৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা।

পরিবারের সদস্যদেরও তাকবির পড়তে উৎসাহিত করা।

নামাজের বাইরেও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবিরের আমল চালু রাখা

বাজার বা হাটে গেলেও অন্তরালে বা স্পষ্ট ভাষায় তাকবির পাঠ করা, যাতে সাহাবিদের সুন্নত বজায় থাকে।

ঈদুল আজহার প্রস্তুতিতে কোরবানির পশু কেনা, খাবার প্রস্তুত, জামা-কাপড়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি এই ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী আমলটি যেন আমরা না ভুলে যাই। এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাত এবং সাহাবিদের আমল—যা ঈদের মাহাত্ম্যকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। আসুন, তাকবিরের মাধ্যমে ঈদের প্রস্তুতি শুরু করি—আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে।

(ঢাকাটাইমস/২ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশি ওষুধ আমদানি বাড়াতে শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান
বিক্রয় কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার চান ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশি হাজীদের সেবায় মিনায় দায়িত্ব পালন করবে ১৮ টীম
ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা