ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ ঘোষণা বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজে প্রকাশিত মিথ্যা নিউজের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি।
মঙ্গলবাদ দলের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ ঘোষণা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি এই ধরনের অসত্য তথ্যসমৃদ্ধ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করে পরিবেশিত সংবাদের তীব্র বিরোধিতা করছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি মনে করে, ভারতীয় মিডিয়ার এ ধরনের আজগুবি সংবাদ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক অংশের হীন পরিকল্পনার অংশমাত্র, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট ও দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তিকে বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করা।
এতে আরও বলা হত, অপসাংবাদিকতার উদাহরণ ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী 'সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে' এহেন ভিত্তিহীন, অসত্য ইঙ্গিত করা হয়েছে যা অপপ্রচার আর কিছু নয়। ভারত সরকার অবশ্যই দুই দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রক্ষায় সেদেশের অপসাংবাদিকতার বিপরীতে অবস্থান নেবেন বলে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি বিশ্বাস করে।
বিবৃতিতে জাস্টিস পার্টি জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক মান ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং সংবিধান রক্ষা ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের আওতায় সুনামের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ এলাকায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অতীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই আপস করেনি,ভবিষ্যতেও করবে না এই বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন এর তীব্র প্রতিবাদ করছে এবং বিরাজমান রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংকটময় মুহূর্তে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে কূটনৈতিক মহলের মাধ্যমে ভারতীয় সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার দাবি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি বাংলাদেশবিরোধী যেকোনো মিথ্যা অপপ্রচার, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে সবসময় ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার থেকেছে এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী, বাংলাদেশের জনগণ ,ভূখণ্ড রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত ও দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিশ্ববাসী অবগত, মিয়ানমার সরকারের নৃশংস গণহত্যার মুখে সেদেশের রোহিঙ্গা নাগরিকরা জীবন বাঁচাতে আরাকান রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও অপরিপক্ব পররাষ্ট্রনীতির কারণে তাদের প্রত্যাবাসনে কার্যকর কোনো নীতি, কৌশল কিংবা রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয় নাই, বরঞ্চ ভারতীয় স্বার্থের অনুকূলে পরিচালিত পররাষ্ট্র নীতিমালা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা ও দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি সমাধানের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবকে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উপস্থিত করে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এবং জাতিসংঘের সহায়তায় একটি বাস্তব কর্মপরিকল্পনা নিয়েছেন যেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বিষয়টির সাথে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকার পরেও কোন কোন মহল অজ্ঞতাপ্রসূত কিংবা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করছেন। হিউম্যারিটেরিয়ান চ্যানেল ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ভারতকে প্রদত্ত করিডরের মতো কোনো ভূ-রাজনৈতিক ছাড় নয়। এটি একটি নিরস্ত্র, নিরাপদ এলাকা বা পথ— যা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বেসামরিক লোক, ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার নিরাপদ চলাচলের জন্য জাতিসংঘের ন্যায় আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানীয় শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চয় অবগত আছেন যে, এরূপ ‘যুদ্ধ বহির্ভূত সামরিক কার্যক্রম’ (Military Operations Other Than War) বিশ্বের বহু দেশ ও অঞ্চলে পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। উদাহরণ: ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের পর যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘অপারেশন সি এঞ্জেলস’।
সমগ্র দেশবাসীর সাথে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি মনে করে, বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সাথে একান্তভাবে জড়িত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত হিউম্যারিটেরিয়ান চ্যানেল সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করা কোন অন্যায় বিষয় নয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে মতামত কিংবা তাদের আশঙ্কার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করার। এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী কিংবা সংগঠন তাদের নিজস্ব লক্ষ্য, নীতি ও পরিকল্পনা জাতিকে স্পষ্টভাবে জানালে জনগণ আশ্বস্ত হবে, সেইসাথে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে নির্ভুল ও স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি মনে করে, যেকোনো কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে কৌশলগত যোগাযোগ বা স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অপরিহার্য।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা না গেলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের রাষ্ট্রহীন মানুষদের চারণভূমিতে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ কর্মসূচি এই ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার সাথে একমত পোষণ করে বিশ্বাস করে,দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত উদ্যোগকে পরিশীলিত, নির্বিঘ্ন ও সফল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চায় এমন কোনো বৈরী রাষ্ট্রের কিংবা তাদের অনুচরদের অপপ্রচারের অনুসারী বা বাহন হওয়া যাবে না।
সবশেষ বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ছাড়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখেই থাকবে।
(ঢাকাটাইমস/০৩জুন/এলএম/এমআর)

মন্তব্য করুন