স্বৈরশাসকদের জন্য আইন যতটা সম্ভব কঠিন করে যেতে চাই: আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২৫, ২১:৫৯
অ- অ+

আইনের এমন সংস্কার করতে সরকার কাজ করছে যেন আরেকটি ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠা কঠিন হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা আছে এটা করার, আমরা তাদের (স্বৈরশাসকদের) জন্য আইন যতটা সম্ভব কঠিন করে যেতে চাই।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (এমেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করার সময় তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইন ও বিচার ব্যবস্থার এমন একটা পরিবর্তন করতে চাই যাতে ভবিষ্যতে যদি একটা অত্যাচারী শাসক গড়ে উঠতে চায়, বা শাসকেরা রুল অব ল লঙ্ঘন করে অথবা স্বেচ্ছাচারিতা করতে চায় সেটা যেন সম্ভব না হয়।’

তিনি বলেন, একটা আইন করতে গেলে অনেক বিস্তারে আলোচনা করতে হয়। সংসদে অনেকবার রিভিউ হয়, বারবার খসড়া হয়। তবু আমরা দ্রুত এ কাজগুলো করছি কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণত জনকল্যাণমুখী আইন করার ব্যাপারে আগ্রহ থাকে না।

তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই করার চেষ্টা করছি। কাজ করছি। তবু দেখা যাচ্ছে অনেকেই বলছেন কোথায় সংস্কার? আবার বলেন এত দ্রুততা কেন। যারা সমালোচনা করেন তাদের মানসিকতার ও একটু সংস্কার প্রয়োজন। এমন অনেক কাজও আমরা করেছি যা এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। কিছুদিন আগে প্রণীত সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশোধনের প্রশংসা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আমরা এটার জন্য অনেক গভীরে গিয়ে কাজ করেছি। আমাদের এই সংস্কার কাজগুলো অব্যাহত থাকবে।

আগের সময়ের তুলনায় এখন সরকারের বিপক্ষে সমালোচনার অবারিত স্বাধীনতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটিও আমাদের একটা বড় সংস্কার বলে আমরা মনে করছি।

মামলার জট কমাতে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টের ভেতর বড় একটা পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছি। এক্ষেত্রে পেটি অফেন্স, আপোষ যোগ্য মামলা, পারিবারিক মামলা, এনআই অ্যাক্টের মামলার ক্ষেত্রে অবশ্যই লিগ্যাল এইড এ যেতে হবে নাহলে তার আগে কোর্টে আসা যাবে না।

এ মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইজিপি বাহারুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, ব্লাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ওমর ফারুক ফারুকী, মো. ইকবাল হোসেন ও মো. বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনসহ আরো অনেকে।

আইজিপি বাহারুল আলম আইন উপদেষ্টাকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই ধরনের আলোচনা আগেও হয়েছে কিন্ত সেখানে পুলিশ থেকে কাউকে পক্ষভুক্ত করা হয়নি। এ ধরনের আলোচনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে এটিই প্রথম।

এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খসড়ায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মেডিক্যাল এক্সামিনেশন কথার উল্লেখ থাকলেও কারা এই মেডিক্যাল এক্সামিনেশন করতে পারবেন তার উল্লেখ নেই, এটি থাকলে ভালো হতো।

ড মাহবুবুর রহমান বলেন, খসড়ায় ম্যাজিস্ট্রেট এর শাস্তি দেয়ার আওতা বৃদ্ধি করা একটি সময়োপযোগী ব্যাপার। তবে তা করা হলে বর্ধিত আওতার বিচারিক প্রক্রিয়াকে সঞ্চালনা করতে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। সেইসঙ্গে ‘পুলিশ’ ও ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’কে একইভাবে সংজ্ঞায়িত না করে আলাদা আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করলে বিভিন্ন বিভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা থাকবে না।

খসড়া অনুযায়ী বেত্রাঘাতের বিধানকে বাতিল করার চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এখানে যেসকল চেঞ্জ (সংশোধন) নিয়ে কথা হচ্ছে , সেগুলো যথাযথভাবে করা গেলে আমি মনে করি গত ২৫ বছর ধরে যে পরিবর্তনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি সেটা আমরা পেয়ে যাবো।

মো তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এ্যাক্ট, প্রিজন্স এ্যাক্ট, প্রিজনার্স এ্যাক্ট এবং জেল কোড ইত্যাদির ভেতর থেকে ঔপনিবেশিকতা বাদ দিতে হবে।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে প্লী বারগেইনিং প্রণয়নের যৌক্তিকতা, শাস্তি ঘোষণা হবার আগে কনডেম সেলে প্রেরণ না করা, আটক বা গ্রেফতারে শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, আটক বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে থানা ব্যতীত কোথাও নেয়ার অনুমতি না দেয়া, মামলাজট থেকে রেহাই পেতে আপসযোগ্য অপরাধের আওতা বৃদ্ধিসহ নানান বিষয়ের উপর মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

সমাপনী বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা সকলকে জানান যে এই বিষয়ে আরো গভীর আলোচনা সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৩জুন/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদযাত্রা: উত্তরে গাড়ির চাপ, নেই যানজট 
ঈদযাত্রা: ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে জটের পর বৃষ্টির বাগড়া
হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার আহ্বান
প্রধান জামাতের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা