১২ দিন পর খুলেছে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্মরণসভায় আবেগঘন মুহূর্ত

ভয়াবহ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার ১২ দিন পর আজ রবিবার (৩ আগস্ট) খুলেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর আগেই আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিহতদের স্মরণে এক শোকসভা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আহত ও নিহতদের পরিবার এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।
মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছুটি বাড়ানো হয়। আজ শ্রদ্ধা ও দোয়া অনুষ্ঠান দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু করা হবে। প্রথম দিন কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।
গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন কলেজের দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হতাহত হন। এখনো অনেকেই চিকিৎসাধীন। নিহতদের স্মরণে আজকের অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শোকসভায় আবেগঘন বক্তব্য দেন দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান। তিনি বলেন, “আমি দুর্ঘটনার ৭-৮ মিনিট আগে সেখান থেকে সরে আসি। সেদিন শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষিকা আমাকে ডেকেছিলেন। না হলে হয়তো আজ আমি থাকতাম না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি দেড় বছর ধরে দায়িত্বে আছি। কোনো দিন ছুটির সময়ে বাইরে যাই না। ওইদিন ব্যতিক্রম হলো... এটা হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।”
নিহত সহকারী শিক্ষক মাসুকা বেগমের আত্মত্যাগ স্মরণ করে তার সহকর্মীরা বলেন, মাসুকা চাইলে নিজে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু শিক্ষার্থীদের ফেলে যাননি। ৮৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে পরবর্তীতে মারা যান তিনি।
নিহত ছাত্র জারিফ হাসানের বাবা হাবিবুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ওইদিন জারিফ স্কুলে যেতে চায়নি... তবুও পাঠানো হয়েছিল। আমার ছেলে খুব বন্ধুবৎসল ছিল, সবাই তাকে ভালোবাসত।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন এবং সহানুভূতিমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী ক্লাস রুটিন ধীরে ধীরে চালু করা হবে পরিস্থিতি বিবেচনায়।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ভবন নিরাপত্তা, দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থী সুরক্ষায় নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই স্মরণসভা যেন একটি শিক্ষা হয়ে থাকে—শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য।
(ঢাকাটাইমস/৩ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন