পুশইন করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় ভারত: কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত `পুশইন' কৌশল বেছে নিয়েছে। বাংলাভাষী ও রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক পুশইন করে ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
মঙ্গলবার সকালে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বিএসএফ কর্তৃক অবৈধভাবে পুশ-ইন বন্ধ করা, ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানো, মানবিক করিডোর ও সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক নাগরিক সভায় তিনি এসব বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশে পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারত। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে বাংলাদেশ চিঠি দিলেও মোটেই তা আমলে নিচ্ছে না ভারত সরকার। এ ছাড়া বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হলেও চোরাপথে বা বিজিবির অগোচরে পুশইনের ঘটনা বেড়ে চলছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ভারত পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধাতে চায়।
তিনি বলেন, শুধু পুশইন নয়, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করা হয়েছে। সেখানে হাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেটি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটা অগ্রহণযোগ্য।
‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. সুকোমল বডুয়া বলেন, আইনবহির্ভূতভাবে পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারত। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ভারতের পুশইন বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার প্রধান পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া পর থেকেই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র দেখাতে শুরু করেছে ভারত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত সরকার প্রতিনিয়ত প্রচার করতো ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। বাস্তবে দেখা যায় ভারত বহু আগে থেকেই বাংলাদেশের সাথে সাম্রাজ্যবাদী আচরণ করে আসছে। সাম্রাজ্যবাদী আচরণের প্রেক্ষিতে গত ৭ মে ভোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ক্রমবর্ধমান নারী, পুরুষ, শিশুদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুই হাজারের অধিক লোক পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ।
তিনি আরও বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদি নরেন্দ্র মোদির সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে লোকজন এনে এক বা দুইটি স্থান দিয়ে নয়, সীমান্তের অনেকগুলো জায়গা দিয়ে পুশ-ইন করা হচ্ছে। যা ভারত কর্তৃক বেশি ডিজাইন করা। বর্ডারে একটা সংঘর্ষ লাগিয়ে যুদ্ধ লাগাতে চায় ভারত। পুশইনের এই ঘটনা তারই প্রমাণ। এর আগে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে এসে অনেকগুলো জায়গা তাদের বলে দখল করেছিল ভারতীয় বাহিনী। তবে বাংলাদেশের জনগণ বিজিবির সঙ্গে মিলে তাদের প্রতিহত করে ছিল।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে একটা সংঘর্ষ লাগিয়ে প্রমাণ করতে চায়, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কারণে পাকিস্তানি জঙ্গিরা সীমান্তে এসেছে। এমন একটি গল্প তারা তৈরি করে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করতে চায়। বিষয়টি কে গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনের দাবি জানাই। পুশইন করা ব্যক্তিদের নোম্যানসল্যান্ডের ভেতর ঢুকতে না দেওয়ার আহ্বান জানাই।
মোস্তফা আল ইহযায বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাট সীমান্তে দুই শর বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু ঢাকার অনমনীয় অবস্থানের কারণে সীমান্তের শূন্যরেখায় তাদের থাকতে হয়েছিল প্রায় দুই মাস। তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগেই দেখা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দুই মাস ধরে থাকা ওই লোকদের ফিরিয়ে নেয় ভারত। বিজিবি নমনীয়তার কারণে এখন দুই হাজারের বেশি পুশ-ইন হয়েছে আরও লক্ষ লক্ষ লোক পুশ-ইন করানোর জন্য অপেক্ষমাণ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এই কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি, বরং তারা এক প্রকার ‘সহযোগিতা’র মনোভাব দেখাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সীমান্তের পূর্ণ এলাকায় সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে হুঁশিয়ার থাকতে এবং সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না। তিনি বলেন, পুশইনের জবাব হচ্ছে পুশব্যাক। ভারতকে আমরা যেভাবে জবাব দেওয়া দরকার সেটি পারছি না। একইভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না।
সভায় আরও বক্তব্যে রাখেন, মেজের জেনারেল আমসাআ আমিন (অব.), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ টি এম জিয়াউল হাসান (অব.), লে. কর্নেল খন্দকার ফরিদুল আকবর (অব.), মেজর হারুনুর রশিদ (অব.), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মফিজুর রহমান (অব.), প্রভাষক এম শাহজাহান সাজু, মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, ড. শরিফ আব্দুল্লাহ হিস শাকি, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, সাহিদুল ইসলাম, সুমাইয়া আক্তার, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসিন, বাপা’র যুগ্ম মহাসচিব ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/০৩জুন/এমআর)

মন্তব্য করুন