স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোরবানির মাংসে মসলার জাদু

কোরবানির ঈদ মানেই ঘরে ঘরে মাংসের বাহারি পদ। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী আর সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে ভাগাভাগি হয় কোরবানির মাংস। এই মাংসের স্বাদ-ঘ্রাণে বিশেষ প্রাণ সঞ্চার করে যেসব উপাদান—তালিকার একদম শীর্ষে রয়েছে মসলা। রান্নায় ব্যবহৃত নানা মসলার এই জাদু শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, এর পেছনে আছে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত দিকও।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে পাওয়া যায় হাজারো রকমের মসলা—গাছের শিকড়, বাকল, পাতা, ফুল, ফল বা বীজ থেকে তৈরি। ফ্লেভার, অ্যারোমা, টেক্সচার—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিকেই কাজ করে মসলা। তবে কোরবানির মাংসের ক্ষেত্রে মসলার প্রভাব হয়ে ওঠে আরও গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এটি মাংসকে করে তোলে সুস্বাদু ও সুগন্ধি, অন্যদিকে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও হজমকারী এনজাইম স্বাস্থ্যরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
কোরবানির মাংস রান্নার বেসিক তিন মসলা হলো আদা, রসুন ও পেঁয়াজ। মিহি বাটা আদা ও রসুন মাংসের কস ভাব দূর করে, সহজপাচ্য করে তোলে। পেঁয়াজের রস বা কুচি, কিংবা ভাজা বেরেস্তা—প্রতিটি উপায়ে এর ব্যবহারে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ আসে। কোরমা, রেজালা বা বিরিয়ানির মতো পদে পেঁয়াজের পরিমাণ ও ধরন পুরো স্বাদটাই নির্ধারণ করে।
কাবাব, গ্রিল, হান্ডি বা চাপের মতো ডিশে ম্যারিনেশনে কম পানি ব্যবহার জরুরি। আদা-রসুন পেস্ট, টকদই, লেবুর রস বা পেঁয়াজের রস দিয়ে ম্যারিনেশন করলে মাংস নরম হয় এবং ফ্লেভার গভীর হয়। বিভিন্ন রকম কাটা মসলার সংমিশ্রণ যেমন বিহারি কাবাব বা গালৌটি কাবাবের টেক্সচারে অভিনবত্ব আনে।
মাংস রান্নায় ব্যবহৃত গুঁড়া মসলা যেমন হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা—এসব তো আছেই, তার সঙ্গে গরম মসলা যেমন এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রি ব্যবহারে ফ্লেভারে আসে রাজকীয়তা। তবে এই মসলাগুলো ব্যবহারে পরিমিতি জরুরি, না হলে খাবারের স্বাদ তিতকুটে বা ভারী হয়ে উঠতে পারে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঝাঁঝালো চুইঝাল, চট্টগ্রাম বা পাবনায় ছোট ধনিয়া বা রাঁধুনির ব্যবহার, ঢাকার মেজবানি মসলা কিংবা মোগলাই রান্নায় বাদামের সংমিশ্রণ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই মসলার ব্যবহার স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করে। পায়া, নেহারি, কালিয়া কিংবা কোরমা—প্রত্যেক পদের জন্য আলাদা মসলার ভারসাম্য দরকার।
জাফরান, শাহি জিরা, মৌরি, কাবাবচিনি, পিপুল মরিচ, কালো এলাচ, তারামসলা, সিচুয়ান গোলমরিচ—এগুলোকে শুধু মসলা না বলে মিরাকল মিক্সও বলা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত যাতার, বেরবেরে, রাস এল হানুত, ক্যাজুন স্পাইস—প্রতিটি মিশ্রণই যুগ যুগ ধরে মাংসের পদের অলংকার হয়ে আছে।
মসলা শুধু রন্ধনশৈলীর অংশ নয়, অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে এর সঙ্গে। আদা ও রসুন হজমে সাহায্য করে, অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে এতে। হলুদ ও দারুচিনি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি। গোলমরিচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আবার চুইঝাল বা পিপুল মরিচ শ্বাসতন্ত্রে উপকারী।
একই মসলা আলাদা পদ্ধতিতে ব্যবহারে আলাদা স্বাদ আনে। যেমন জিরা বেটে দিলে এক রকম, ফোড়নে দিলে আরেক রকম, আর শেষে টেলে গুঁড়া করে ছিটিয়ে দিলে অন্য জাদু। এটাই মসলার খেলা।
শেষ কথা, মসলা হলো কোরবানির মাংস রান্নার সেই যাদুকর হাতিয়ার, যা ঠিকঠাক ব্যবহার করলে স্বাদ, ঘ্রাণ, সৌন্দর্য—সবদিক থেকেই আপনি হয়ে উঠবেন ঈদের দিনের শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি।
(ঢাকাটাইমস/৩ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন