সর্ষের তেলে রান্না করলে কি হার্টের ঝুঁকি বাড়ে?—বিশেষজ্ঞরা বলছেন যা

হার্ট অ্যাটাক এখন আর শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরাও আজকাল অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়ছেন। ঠিক যেমন বছর পঁচিশের অর্ক—নতুন একটি কর্পোরেট চাকরিতে যোগ দিয়েই এক মাসের মাথায় হঠাৎ অফিসে বুকে ব্যথা। হাসপাতালে গিয়ে ধরা পড়ে মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক!
এই অর্কের গল্প আজ অসংখ্য তরুণের বাস্তবতা। পুষ্টিবিদদের মতে, জীবনধারায় পরিবর্তন না আনলে ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে না তুললে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে। আর খাবারের মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে তেল—কোন তেলে রান্না হচ্ছে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের হৃদ্যন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
সর্ষের তেল কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
বাঙালির প্রিয় সর্ষের তেল নিয়ে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সর্ষের তেলে রান্না করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু এই ধারণা কতটা সত্য?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘‘হার্ট ভাল রাখতে হলে এমন তেল খেতে হবে, যেখানে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট কম এবং মোনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকবে।’’ সর্ষের তেলে এই দুটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে। এছাড়া এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ায় এবং ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমায়।
তবে সতর্কতাও আছে। সর্ষের তেলে ইরিউসিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীরে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। তাই উপকার পেতে হলে তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কোন কোন তেল হার্টের জন্য সবচেয়ে উপকারী?
১. অলিভ অয়েল (অলিভ তেল): হার্টের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত তেল এটি। এতে রয়েছে মোনো ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না এবং রক্তনালীকে সুস্থ রাখে। বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হৃদরোগীদের জন্য আদর্শ।
২. বাদাম তেল (পিনাট অয়েল): চিনেবাদামের তেলও হার্টের জন্য ভালো। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশি থাকে। এটি কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে যাদের বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের এই তেল এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. সর্ষের তেল: উপরেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে—পরিমাণ বজায় রেখে সর্ষের তেল খেলে তা হার্টের পক্ষে উপকারীই হতে পারে।
৪. তিল ও রাইস ব্র্যান অয়েল: পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, হার্টের যত্নে তিলের তেল কিংবা রাইস ব্র্যান অয়েলও ভালো বিকল্প হতে পারে।
তেল হোক, তবে মাত্রায়
তেল যতই স্বাস্থ্যকর হোক, অতিরিক্ত গ্রহণ করলেই বিপদ! পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতিদিন একজন সুস্থ পুরুষের জন্য ৪-৫ চা চামচ এবং একজন মহিলার জন্য ৩-৪ চা চামচ তেল যথেষ্ট। এর বেশি তেল খেলে ওজন যেমন বাড়বে, তেমনি হার্টের ওপর বাড়বে বাড়তি চাপ।
তেল বাদ দেওয়া যাবে না—শরীরের জন্য এই পরিমাণ তেল প্রয়োজন। তবে তেল দিয়ে ভাজাভুজি বা ফাস্ট ফুড নয়, বরং হালকা রান্না হলে সেটাই শরীরের জন্য উপকারী।

মন্তব্য করুন