ভেষজ বিলাতি গাব খেলে দূর হবে ক্যানসার, নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস

গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে বিলাতি গাব ফলটির বিস্তার চোখে পড়ার মতো। কোন রকম যত্ন ছাড়াই অবহেলায় বিলাতি গাব বেড়ে ওঠে। সাধারণত আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাস জুড়েই সিঁদুর মাখা বিলাতি গাব বাজারে উঠতে শুরু করে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই ফলে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই গাবের রয়েছে বিশেষ কার্যক্ষমতা।

আমাদের দেশে দেশি এবং বিদেশি দুই ধরনের গাব পাওয়া যায়। যদিও দেশি গাবের চাইতে বিলাতি গাবের চাহিদা বেশি। গাব বা বিলাতি গাব খেতে দারুণ সুস্বাদু ও মিষ্টি।

বিলাতি গাবকে Velvet-apple নামেও ডাকা হয়। কারণ এটি দেখতে অনেকটা লাল আপেলের মতোই এবং এর গা মখমলের মতো মসৃণ! এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের চিরসবুজ বৃক্ষ।

মেরুন কালারের লোমশ আবরনের নীচে বীচিসহ বাদামী সুস্বাদু শাসযুক্ত বিলেতি গাব। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে দেশী ফলের সাথে জায়গা করে নিয়েছে বিলেতি হয়ে ও এই সুদৃশ্য গাব। শরতকালে অন্যান্য দেশি ফলের সাথে বিলেতি গাবও তালের সাথে পাল্লা দিয়ে পাকে।

বিলাতি গাব এবিনাসি পরিবারের ডিয়োসপিরস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ডায়োস্পাইরস মালাবারিকা। আদি নিবাস ফিলিপাইন হলেও বাংলাদেশে গ্রামেগঞ্জে এই ফলের দেখা মেলে। বর্তমানে ফলের দোকানগুলোতেও দেখা যায় এই মৌসুমী ফলের। আর সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছড়িয়ে বাজারে উঠে যায়।

গবেষণা বলছে, ফলটির আয়রন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এটি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী ।

আমাশয় ও পেটের অসুখে এই গাছের ছাল বেশ উপকারী। বহুমূত্র, ক্যান্সার, একজিমা, চর্মরোগ, আমাশয়, মূত্ররোগে গাব একটি কার্যকর ভেষজ।

প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যউপযোগী গাবে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৫০৪ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৩.০ থেকে ৮৪.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৮ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ১১.৮ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১.৮ গ্রাম, চিনি ১১.৪৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৩৫ আইইউ, ফসফরাস ১৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম। গাবের এসব পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে রক্ষা করে নানা রোগ থেকে। জেনে নিন বিলাতি গাবের স্বাস্থ্য উপকারিতা-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

উচ্চমাত্রায় খাদ্যশক্তি থাকায় আপনার শরীরের দূর্বলতা দূর হয়ে যায়। বিলাতি গাব ভেষজ চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিলাতি গাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

বিলাতি গাবে প্রচুর আঁশ থাকায় কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। এতে অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

গাবে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ রয়েছে। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রেডিক্যাল কমিয়ে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই দুই ভিটামিন বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, জটিল রোগ প্রতিরোধ এবং ত্বকের সুস্থতার জন্য বেশ কার‌্যকরী।

হাইপারটেনশন কমায়

উচ্চ পটাসিয়াম উপাদান থাকায় রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়। এটি শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর চাপ কমায় এমনকি রক্তচাপ্ও কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা আঁশ শরীরে কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া্ও রক্ত চাপ, হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়

গাবে থাকা আয়রন দেহে লোহিত কণিকার কোষের উন্নতি ঘটায়। দেহের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি পেশি গঠন, চুলের বৃদ্ধি এবং হজমক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

হজমে সহায়ক

গাবে প্রচুর আঁশ থাকার কারণে এটি হজমক্রিয়া উন্নতিতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা দূর করে।

ত্বকের প্রদাহ কমায়

বিলাতি গাব খেলে বা এর তৈরি রূপচর্চার উপাদান ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ কমায়।

অ্যাজমা দূর করে

গাব খেলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, বুকে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং অ্যাজমা দূর করে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

(ঢাকাটাইমস/১৬ জুলাই/আরজেড)