গোপালগঞ্জে এনসিপি কর্মসূচিতে হামলা: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা, আসামি ৪৭৫ জন

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, ১৬ জুলাই এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। তবে কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়। পুলিশের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িবহরেও হামলা হয়। স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসব ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে পুলিশ।
দুপুরে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় সাউন্ড সিস্টেম, চেয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী। উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপরও চালানো হয় হামলা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশি সহায়তায় এনসিপি নেতারা সরে যান। পরে আধা ঘণ্টা পর একই স্থানে পুলিশি নিরাপত্তায় সমাবেশ করে এনসিপি, যেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে ফেরার পথে আবারও হামলার শিকার হয় এনসিপি নেতাদের গাড়িবহর। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হামলাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
ঘটনার পরপরই গোপালগঞ্জ শহরে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। পরে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলেও শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।
বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অন্তত ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর এনসিপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরে সেনাবাহিনীর এপিসি-তে করে তাদের খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গোপালগঞ্জে এই সহিংসতার ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠন। এনসিপির পক্ষ থেকে এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এ ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে এনসিপি ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান শুক্রবার দুপুরে জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের থানায় রাখা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়, আর বাকি ২০ জনকে রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখনও জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এসএস)

মন্তব্য করুন