ফিরে দেখা: ২৬ জুলাই
কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন শীর্ষ নেতাকে ফের তুলে নেয় ডিবি, দেশজুড়ে গ্রেপ্তার ছাড়ায় ৬ হাজার

রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন প্রধান সমন্বয়ক—নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একদল ব্যক্তি প্রথমে নাহিদ, পরে আসিফ ও বাকেরকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি স্বীকার করে ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে তিনজনকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা, তা জানতেই এই পদক্ষেপ।’
তিন সমন্বয়ককেই এর আগেও ১৯ জুলাই রাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘তোলা’ হয়েছিল। পরে কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর পূর্বাচল, হাতিরঝিল ও ধানমন্ডি এলাকায় তাদের ফেলে যাওয়া হয়। সেই থেকেই তারা গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এদিন রাতে সাংবাদিকদের জানান, তিন আন্দোলনকারী নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে নিয়েছে।
দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান ও মামলা:
একইদিন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনা করে ‘ব্লক রেইড’সহ সাঁড়াশি অভিযান। গত ১০ দিনে (১৭-২৬ জুলাই) মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ হাজার ২৬৪ জন। শুধু শুক্রবার দিনভর গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৬৫ জন, যার মধ্যে রাজধানীতেই ২০৭ জন।
ঢাকায় নতুন করে আটটি মামলা হওয়ায় এখানকার মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৯টি। ঢাকার বাইরেও নতুন করে ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে।
আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল পীরগঞ্জে গিয়ে এই চেক হস্তান্তর করে।
এদিন সহিংসতায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও তিনজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আন্দোলন ঘিরে মোট নিহতের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
শুক্রবার বিকালে সহিংসতায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে আহতদের চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার।’ সকালে তিনি রামপুরায় বিটিভি ভবনে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ‘দেশে গণগ্রেপ্তার, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।’ তিনি সরকারের পতনের দাবিতে ‘জাতীয় ঐক্য’র আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংস দমননীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি ড. রুপা হক বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
টিআইবি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভিন্নমত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সাংবিধানিক অধিকার।’ সুজন ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সহিংসতা ও প্রাণহানির প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি জানায়।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকটির নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ রাখা হয়েছে। রুদ্র ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক সাহসী সংগঠক, যিনি আগেই সংঘর্ষে নিহত হন।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/এসএস)

মন্তব্য করুন