চাঁদাবাজদের প্রতি কড়া বার্তা পুলিশ কর্মকর্তার
“টাকা দিয়ে আমাকে কিনে নেওয়ার মতো কেউ এখনও জন্মায়নি”

নরসিংদীতে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তব প্রতিচ্ছবি এখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শামীম আনোয়ার। সম্প্রতি প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দুই জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পর, চাঁদাবাজ চক্রের গায়ে যেন আগুন লেগেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টের মাধ্যমে সেই আগুনেই যেন ঢেলে দিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নরসিংদীর ডিকশনারি থেকে ‘চাঁদাবাজি’ শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে জানিয়ে সোমবার ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতায় পোস্টটি করেন পুলিশ কর্মকর্তা শামীম আনোয়ার।
ঢাকাটাইমস পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
প্রিয় চান্দা-ভাইয়েরা, নরসিংদীতে আমরা আপনাদের দুই সহযোগী প্রকাশ্য চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করায় জানি আপনাদের আঁতে ঘা লেগে গেছে। আমাকে থামাতে নানামুখী আয়োজনও চলছে আপনাদের। লোভ-লালসা থেকে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, বাদ যাচ্ছে না কোনোটাই। হয়তো ভাবছেন, পুলিশ অফিসারেরা অমন আওয়াজ টুকটাক দেয়ই। বাণ্ডিলের প্রত্যাশা জানান দেওয়া আরকি! হয়তো মোটা কলেবরের 'কিছু' পকেটে পুরে দিলেই টুপ করে চুপ মেরে যাবে। যারা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে পয়সার লোভ দেখিয়ে আমাকে থামাতে চান, তারা দয়া করে আমার চাকুরি জীবনের ইতিহাসে একটু নজর বুলিয়ে নিবেন। নরসিংদীতেও আমার গত ৮/৯ মাসের কর্মকালে ওসি, এসআই থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এক কাপ চা-ও খাওয়াতে পেরেছেন কিনা! আই লিটারেলি মিন- 'এক কাপ চা'। প্রমাণ লাগবে না, কেউ মুখেমুখে হলেও বলুক! শুধু এটুকুই বলব- টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে পারে, বাংলাদেশে কোনো মায়ের গর্ভে এমন সন্তানের জন্ম অদ্যাবধি হয়নি। প্লিজ কাম টু নো। পুরো চাকরি জীবনে একটি অবৈধ পয়সা গ্রহণ করেছি প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে কামলা দিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করব।
আর যারা প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে আমাকে ভ য় দেখানোর চেষ্টায় রত আছেন- ভবিষ্যতে আমাকে দেখে নিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি, তাদেরকে বলব, আমাকে আপনারা চিনেননি। আমি চাকরির মায়া করে কাজ করি না ভাই। ভবিষ্যত তো দূরঅস্ত, এমনকি আগামীকালও যদি আমাকে পুলিশ থেকে চলে যেতে হয়, এ নিয়ে কখনো আমার সামান্যতম অনুশোচনাও থাকবে না। রিজিকের মালিক রাজ্জাক। আর জেনে নিন, জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে- এ বিশ্বাস হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত না থাকলে চুনোপুঁটিতূল্য নগন্য এক অফিসার হয়ে আপনাদের মতো মহাপরাক্রমশালীদের সাথে পাঙ্গা নিতে আসতে পারতাম না।
আরেকটা কথা, আমার নাম করে কেউ টাকা চাইলে বা আপনারা কাউকে টাকা দিলে নিশ্চিত থাকবেন সেই টাকা প্রতারকের পকেটে গেল। ভবিষ্যতে আবার বলবেন না যে, 'আপনার জন্য না ওমুককে দিয়ে বাণ্ডিল পাঠালাম। আবার আমার লোককে ধরলেন যে! আবারও সতর্ক করছি, সংশোধন হয়ে যান। অন্যথায় আমি অতি নগন্য একজন অফিসার হয়ে আপনাদের মতো ক্ষমতাশালীদের প্রতিপক্ষ হতে বাধ্য হব। মনে রাখবেন, এবারেরটা ছিল শুধু প্রাথমিক বার্তা মাত্র। পরের ধাপ আরো কঠোর হবে। আশা করি, আপনারা সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাইবেন না। ইনশাআল্লাহ নরসিংদীর ডিকশনারি থেকে চাঁ দা বাজি শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে, হবে, হবে। অতীতে যা ছিল শুধু আপনার ভাবনায়, সেসবের বাস্তব রূপদান শুরু হবে প্রাণের নরসিংদী থেকেই।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এলএম)

মন্তব্য করুন