প্রকৃত রহস্য ফাঁস করলো পিবিআই
বিয়ামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: ভাড়াটে দিয়ে আগুন লাগান প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চুক্তি হয় ১০ লাখে

রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ভবনে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছিলেন বলে প্রথমে জানানো হলেও, তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সমবায় সমিতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া। এতে দুর্ঘটনাবশত দুইজনের মৃত্যু ঘটে।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনাটি তদন্তে গিয়ে তারা দেখতে পান—ঘটনার পেছনে ছিলেন বিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম। তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভবনের একটি কক্ষে আগুন ধরিয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
এই কাজে তিনি ভাড়া করেন তার পূর্বপরিচিত আশরাফুল ইসলামকে। দুজনের মধ্যে নথিপত্র ধ্বংসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুল সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন এবং অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক ও গাড়িচালক ফারুক ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন লাগার পরপরই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনাস্থলেই মারা যান অফিস সহায়ক মালেক। আহত গাড়িচালক ফারুককে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মারা যান।
আব্দুর রহমান জানান, শুরুতে এসি বিস্ফোরণ বলে ধারণা করা হলেও পিবিআই ঘটনাস্থলের আলামত, সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার ভিন্ন চিত্র পায়। গ্রেপ্তার করা হয় আশরাফুল ও জাহিদুল ইসলামকে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পিবিআই জানায়, আগুন লাগানোর কাজে ব্যবহারের জন্য আশরাফুলকে মাস্ক, গ্লাভস, মাস্কিং ক্যাপ ও পেট্রোল কিনে দেন জাহিদ। ঘটনার দিন মধ্যরাতে আশরাফুল ভবনে প্রবেশ করে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। এরপর চুক্তিমাফিক মালেক ও ফারুক কক্ষে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলেন, এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, মূল উদ্দেশ্য ছিল নথিপত্র ধ্বংস। কিন্তু নিরাপত্তাবিধি উপেক্ষা করে আগুন ধরানোর কারণে দুইজনের মৃত্যু ঘটে, যা এখন হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে।
ঘটনার পর দুই মাস মামলাটি তদন্ত করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। ৬ মে থেকে পিবিআই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এবং দ্রুতই আসামি শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়।
পিবিআই বলছে, এ মামলার তদন্ত এখনও চলমান। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন