৭০ শতাংশ লিভার ক্যানসারের কারণ হেপাটাইটিস বি, বাংলাদেশে আক্রান্ত এক কোটি মানুষ

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:২২
অ- অ+

আজ ২৮ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০২৫। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘আসুন রুখে দিই :সঠিক তথ্য জানুন, পদক্ষেপ নিন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নির্মূলের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হেপাটাইটিস একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এখানে এখনো অনেক ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহার নিশ্চিত নয়, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতি আছে এবং জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তবে আশার কথা হলো, হেপাটাইটিস প্রতিরোধযোগ্য। হেপাটাইটিস ৪-এর কার্যকর ও নিরাপদ টিকা রয়েছে এবং হেপাটাইটিস ই-এর চিকিৎসাও এখন অনেক সহজলভ্য ও কার্যকর। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে জীবন বাঁচতে পারে।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। তিনি এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাব্যবস্থা উন্নত করেন ও টিকা দেওয়া শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে তার জন্মদিনে (২৮ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়।

হেপাটাইটিস শব্দটি গ্রিক ‘হেপার’ থেকে এসেছে, যার অর্থ যকৃৎ এবং ‘টাইটিস’ অর্থ প্রদাহ। হেপাটাইটিস মূলত জ্বর, ক্ষুধা কমে যাওয়া, বমি ভাব, বমি হওয়া এবং পেটে ব্যথার মতো লক্ষণ দিয়ে শুরু হয়। এটি জন্ডিস, গাঢ় প্রস্রাব, ফ্যাকাশে মল এবং কিছু ক্ষেত্রে তীব্র যকৃৎ অকার্যকর হতে পারে।

প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট (২০১৯)-এর তথ্য অনুসারে, যকৃৎ ক্যান্সারের শতকরা ৪২ ভাগ রোগী এইচবিভি (হেপাটাইটিস বি) এবং শতকরা ৩১ ভাগ রোগী এইচসিভি (হেপাটাইটিস সি) দ্বারা দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমিত ছিল। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নামক এক জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। বর্তমানে শতকরা প্রায় ছয়জন মানুষ এই ভাইরাস দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে বহন করছেন। দীর্ঘমেয়াদি যকৃতের রোগ ও যকৃতের ক্যান্সারের প্রধানতম কারণ এই ডিএনএ ভাইরাস।

বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি বছর এই রোগে ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে, তারা এই রোগে আক্রান্ত কি না। বাংলাদেশে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এদেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসার হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণেই হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন এবং হেপাটাইটিস ভাইরাস নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস শুধু একটি লিভারের রোগ নয়এটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত (হেপাটাইটিস এ. বি. সি. ই) লিভার রোগে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই জানেন না যে তারা সংক্রমিত। এই নীরব মহামারি লক্ষণহীনভাবে শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফলে মানুষ লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন; এবং প্রতি বছর প্রায় ১.৩৪ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটসে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করছেন। দীর্ঘসময় হেপাটাইটসে আক্রান্তের কারণে মানুষ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর বাংলাদেশে ক্যানসারে মৃত্যুর তৃতীয় ধাপে রয়েছে লিভার ক্যানসার।

হেপাটাইটিস এ ও ই সাধারণত পানি, খাদ্য ও মল বাহিত যা ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছনতা ও জীবাণুমুক্ত খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে সচেতন হলেই বিস্তার রোধ করা যায়। অন্যদিকে হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত মা হতে বাচ্চার কাছে, অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ও যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যশিক্ষা, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার এবং কমিউনিটি পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এদেশে ১০ লাখ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেছনে ব্যয় হয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩ বিলিয়ন ডলারে। অবশ্য এসব হিসাব-নিকাশও প্রায় পাঁচ বছরের পুরোনো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা খরচ আরও বাড়বে।

পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে বেশির ভাগই এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাস করেন। প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। তারা প্রত্যেকেই জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে গিয়ে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান বলেন, হোপাটাইটিস একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিশেষ করে বি ও সি ভাইরাসের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই রোগ পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই পানযোগ্য পানি ও খাবার বিশুদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া সকল রোগীকে শনাক্তের আওতায় আনতে হবে এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চাঁদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
আইজিপির সাথে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ারের সাক্ষাৎ
ইউএন মানবাধিকার কমিশনের অফিস ইস্যুতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে: মঞ্জু
খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠাতে সরকারের কাছে বিএনপির চিঠি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা