গরিব হয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ১৪:১০| আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৪:৪৫
অ- অ+

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক এখন গরিব হওয়ার পথে। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই সম্পদমূল্য কমতে শুরু করেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইলন মাস্কের সম্পদমূল্য কমেছে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

টেক জিনিয়াস ইলন মাস্ক গত বছরের শেষে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক হন। মাস্কের সম্পদের বড় অংশ তাঁর ইলেকট্রিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি টেসলার শেয়ার থেকে আসে। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে নাটকীয়ভাবে। হঠাৎই প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়ে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল ক্ষতির মূল কারণ টেসলার শেয়ারের ধারাবাহিক দরপতন, রাজনৈতিক বিতর্ক, আন্তর্জাতিক বাজারে টেসলার গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়া এবং একের পর এক প্রতিযোগীর উত্থান।

টেসলার শেয়ারের টানা পতনের ফলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইলন মাস্ক হারিয়েছেন প্রায় ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে , তখন তাঁর মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছিল ২৯৭.৮ বিলিয়ন ডলারে। ব্লুমবার্গের মতে, পৃথিবীর ৫০০ জন ধনীর মধ্যে 'লারজেস্ট লুজার' হিসেবে ৬ষ্ঠ অবস্থানে আছে এই টেক জিনিয়াস।

টেসলার ২১ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। তার সম্পত্তির একটি বড় অংশে এই কোম্পানির অবদান রয়েছে। টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তা মাস্কের মোট সম্পত্তিকে প্রভাবিত করেছে। এই বছর এখন পর্যন্ত টেসলার কোম্পানির দাম ২৯ শতাংশ কমেছে।

গত বছর চীনে বিক্রি হতাশাজনকভাবে কমার খবর দেয় এই গাড়ি নির্মাতা। চীনে খুব কম সংখ্যক বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করেছে টেসলার। নাশকতার কারণে বার্লিনের কাছে কারখানাটির উৎপাদনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব ঘটনা কোম্পানিটির শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করেছে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর টেসলার শেয়ারমূল্য ছিল আকাশছোঁয়া। মাস্কের সম্পদ তখন ইতিহাস গড়ছিল। কিন্তু এখন সেই রাজনৈতিক সম্পর্কই যেন উল্টো বিপদ ডেকে এনেছে তাঁর।

মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি (DOGE)–তে অংশগ্রহণ আর ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় লোকজন। এর ফলে টেসলার প্রতিও ক্ষোভ বাড়ছে। শুধু আমেরিকায় না, বিদেশেও একই পরিস্থিতি।

এই নেতিবাচক প্রভাবে বছর শুরুর দিকেই টেসলার গাড়ি বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে। বিনিয়োগকারীরা এতে বেশ উদ্বিগ্ন । বিনিয়োগ কমার ফলে টেসলার শেয়ারমূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যার প্রভাব পড়েছে মাস্কের মোট সম্পদে।

অন্যদিকে ইলন মাস্ককে ঘিরে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিয়মিতভাবে মাদক সেবনের অভিযোগ উঠেছে মাস্কের বিরুদ্ধে।

নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্ব গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)’ নামে একটি বিশেষ ইউনিটের নেতৃত্ব দেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বৈঠকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। তবে একই সময় তিনি নিয়মিতভাবে কেটামিন, এক্সট্যাসি এবং সাইকেডেলিক মাশরুমের মতো উচ্চমাত্রার মাদক গ্রহণ করতেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাস্কের মাদক গ্রহণের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, তা তার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তার মূত্রথলির জটিলতার পেছনে নিয়মিত কেটামিন সেবনকে দায়ী করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, মাস্ক প্রতিদিন কেটামিন গ্রহণ করতেন এবং সবসময় সঙ্গে রাখতেন প্রায় ২০ ধরনের ওষুধভর্তি একটি বাক্স, যেখানে অ্যাডেরলের মতো উত্তেজক ওষুধও ছিল। একটি ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়, সেই বাক্সে ছিল অ্যাডেরল চিহ্নিত বড়ি।

এসব কিছু নতুনমাত্রা যোগ হওয়ায় ব্যবসায়িকভাবে নিজেও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। গরিবের পথে ক্রমশ নেমে যাচ্ছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মাস্কের দাম্ভিক আচরণ অনেক গ্রাহককে হতাশ করেছে। এদিকে চীনা ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি (BYD) নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে চমকে দিচ্ছে সকলকে। তাদের অত্যাধুনিক চার্জিং প্রযুক্তি দিয়ে আকর্ষণ করছে নতুন ক্রেতাদের। মাত্র ৫ মিনিটে ২৫০ মাইল রেঞ্জ দেওয়া ব্যাটারি তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন, যা টেসলার প্রযুক্তিকে পিছনে ফেলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে বিওয়াইডি বিক্রির হার ও আয় বাড়ছে দ্রুত। ইতিমধ্যে টেসলার চেয়ে বেশি বার্ষিক আয় করতে শুরু করেছে কোম্পানিটি। চীনে ও ইউরোপে বিওয়াইডি-এর এই জনপ্রিয়তা মাস্কের আরও বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার সঙ্গে মাস্কের ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেতনের চুক্তি বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। এটিও মাস্কের সম্পত্তির পরিমাণ কমার একটি কারণ।

আবার টেসলার বিপরীতে বাজারে এসেছে এক নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী। এদের পরিচিতি অ্যান্টি-টেসলা হিসেবে। প্রযুক্তির সঙ্গে মূল্যবোধও যাদের কাজের জায়গা। রিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছ ব্যবসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারা কাজ করছে। ফলে এই নতুন ব্র্যান্ডটি সহজেই তরুণ প্রজন্ম ও সচেতন গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। চারদিকের এসব চাপের মুখে ইলন মাস্ক গরিবের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/১ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
উপদেষ্টার নির্দেশনা ছাড়া পিএসরা দুর্নীতি করে নাই: আমিনুল হক 
নারায়ণগঞ্জে ৫ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ ভারতীয় পণ্য জব্দ 
ডিসেম্বরে রূপপুরের বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে: অর্থ উপদেষ্টা
লায়ন্স ৩১৫বি৩ দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর হলেন ডা. মাজহারুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা