আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেষ হচ্ছে কাল, সময় না বাড়ায় ব্যবসায়ীদের হতাশা

শাকিল আহম্মেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
  প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:১৯| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৪২
অ- অ+

রাজধানীর পূর্বাচলে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেষ হচ্ছে কাল মঙ্গলবার। সাধারণত ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও নির্বাচনের কারণে এবার মেলা কিছুটা পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মেলা উদ্বোধন হয় ২১ জানুয়ারিতে।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রচার ও প্রসার এবং বিদেশি আমদানি-রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশি আমদানি-রপ্তানিকারকদের মেলবন্ধনের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর ছিল এটি। মেলার সময় বাড়ানোর আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে মাঝে আর ক্রেতাদের দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।

গতকাল মেলা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা ও আশপাশের জেলার লাখ লাখ মধ্যবিত্ত শ্রেণির বার্ষিক কেনাকাটা ও বিনোদনের একটি মাধ্যমে থেকে অনেকেই ছাড়ের আশায় এসে মেলা থেকে পণ্য ক্রয় করেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলা হলেও গত ৩ বছর ধরে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মেলায় তৈজসপত্র, কাপড়চোপড়, অলংকার, প্লাস্টিক সরঞ্জাম, খাদ্যদ্রব্যসহ নানারকম জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। বাংলাদেশি বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অনেক ছোট ছোট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও অংশ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

পূর্বাচলে ২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মিত হয়েছে। প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৭ হাজার ১৭৩ স্কয়ার মিটারের দুইটি পৃথক প্রদর্শনী হল রয়েছে।

সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কেন্দ্রে সম্মেলন কক্ষ, সার্ভিস রুম, প্রেস কক্ষ, খাবারের জন্য বিশাল কক্ষ আর বাচ্চাদের খেলার জায়গা রয়েছে।

মেলায় লোকজনের আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য বিআরটিসির দোতলা বাসের সেবা দেওয়া হচ্ছে। কুড়িল বিশ্বরোডের মোড় থেকে এসব বাসে করে মেলা পর্যন্ত যাওয়া যায়। মেলায় এবার বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্টল প্যাভিলিয়ন থাকলেও নজর কেড়েছে কারাপণ্যের প্যাভিলিয়ন। বেশ কিছু দর্শনার্থীর আগ্রহ আবার কারপার্কিং স্ট্যান্ডে।

মগবাজার থেকে আসা গৃহিণী হালিমা বেগম বলেন, এতদিন শুনতাম কারাগারে বসে কয়েদিরা পণ্য তৈরি করে। এখন নিজ চোখে দেখলাম। কিনলাম। ২৪০০ টাকা দাম লেখা। ছাড় দিয়ে ১৮০০ টাকায় বিক্রি করলো। ভালো লাগলো।

কথা হয় কারা অধিদপ্তরের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ ও খুলনা জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. জামাল মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, সারাদেশে ৬৮টি কারাগারের ৩৩টি কারাগারেই পণ্য তৈরির কারখানা ও হস্তশিল্পের সুযোগ রয়েছে। কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করতেই সরকারের এমন উদ্যোগ। আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। ক্রেতারা ভালো পণ্য কমদামে পাচ্ছে। এসব বিক্রীত পণ্যের ৫০ ভাগ মুনাফা শিল্প সংশ্লিষ্ট কয়েদিরা পেয়ে থাকেন।

কথা হয় গাজী গ্রুপের হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা ও প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শেখ ফরিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় ৩০ দিনে ভালো সাড়া পেয়েছি। বিক্রিও ভালো হয়েছে।

মেলায় গাড়ির পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের একটি খোলা বুথ চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীরা একবার হলেও তা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। অনেকে বিষয়টি জানতে প্রদর্শনী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন।

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা রোকসানা বলেন, বাণিজ্য মেলায় তো প্রতিদিন আসার কিছু নেই, একবার এলেই যথেষ্ট। তবে পরিবারের জন্য দরকারি কিছু তৈজসপত্র কেনার ইচ্ছা থেকে প্রতিবছর এই মেলায় আসা হয়।

মেলায় ঘুরতে আসা কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব মীর আব্দুল আলীম বলেন, মেলা ঘুরে দেখলাম, তুলনামূলক দর্শনার্থী কম। তবে পূর্বাচলে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় যাতায়াত পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা খুবই ভালো লাগলো। আর মেলা প্রথমেই জমবে এমন আশা করা যায় না। ক্রমেই জমবে। ঢাকা বাইপাস সড়কের ৮ লেন হলে এ মেলার পরিধি বাড়াতে হবে।

এদিকে মেলায় থাকা ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ লক্ষণীয়। মেলার সময় বাড়াতে ব্যবসায়ীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ব্যবসায়ী মাসুম চৌধুরী অপু বলেন, আমরা ৩ দিনের সময় চেয়ে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে আবেদন করেছি। তারা নাকচ করলেও একদিন মেলার সময় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাতে আমাদের কিছুই হবে না। লোকসানের আশঙ্কা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, এবার মেলার সময়সূচি নিয়ে শুরু থেকে জল ঘোলা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মেলা উদ্বোধন হয় ২১ জানুয়ারিতে। সময় নিয়ে নিশ্চিত না থাকায় এবং নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে, এ নিয়ে সংশয় থাকায় মেলার শুরুতে প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। তাই অনেকেই সময়মতো স্টল প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে পারেনি। আমরাও পারিনি। যে টাকায় বরাদ্দ নিয়েছি সে টাকা তুলতে পারবো না। লোকসান হবেই। তাই আমাদের কথা বিবেচনা করে সময় বাড়ানো দরকার।

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মেসির গোলে ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথম জয় মিয়ামির
হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিলে গোটা অঞ্চল নরক হয়ে উঠবে: বিবিসিকে ইরানের উপমন্ত্রী
সময় মাত্র দুই সপ্তাহ!
ইরানের মিসাইলগুলো বিশ্বের সম্মানিতদের আনন্দিত করেছে: খামেনি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা