গোপালভোগ-গোলাপখাসে শুরু সাতক্ষীরার আম মৌসুম

রসালো স্বাদের জন্য খ্যাত সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম এবারও মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আগেই দেশের বাজারে উঠতে শুরু করেছে গোপালভোগ-গোলাপখাসসহ দেশীয় জাতের আম।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের বেলাল হোসেনের আমবাগানে আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আম সংগ্রহ মৌসুমের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, সারা দেশে আম সংগ্রহ কার্যক্রমের শুভ সূচনা সাতক্ষীরা থেকেই হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া এবং মাটির গুণগতমানের কারণে এখানকার আম আগে পরিপক্ব হয় এবং বাজারে ভালো দামও পায়।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরার আম, বিশেষ করে হিমসাগর জাতটি দেশব্যাপী পরিচিত ও জনপ্রিয়। আমের গুণগতমান রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, উপকূলীয় জেলা হওয়ায় এখানকার আবহাওয়া ও মাটি আম চাষের জন্য খুবই অনুকূল। ফলে এই অঞ্চলের আম সুস্বাদু, ঘ্রাণযুক্ত এবং টেকসই হয়। দেশের বাজারে সবচেয়ে আগে এখানকার আমই পাকে, যার কারণে চাহিদাও বেশি।
জেলার আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রথম ধাপে বাজারে এসেছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস, বোম্বাই ও বৈশাখীসহ দেশীয় জাতের আম। পর্যায়ক্রমে ২০ মে হিমসাগর, ২৭ মে ল্যাংড়া এবং ৫ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারে উঠবে বলে জানা গেছে। এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার আম বাগান রয়েছে। চলতি বছর এখান থেকে ৬২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। যার মধ্যে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে, শহরের সুলতানপুর বড় বাজারে চাষি ও পাইকারদের ভিড়ে প্রথম দিনেই পা ফেলার জায়গা নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মণ আম আসতে শুরু করেছে সেখানে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন চাষিরা। তাদের অভিযোগ, জেলায় একটি মাত্র বড় বাজার থাকায় সবাইকে সেখানেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে। জায়গা সংকট ও যানজটের কারণে তারা পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে। এতে অনেক সময় ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান তারা।
চাষিদের দাবি, জেলায় আরও কয়েকটি পাইকারি বাজার চালু করা এবং খোলা মাঠে ভ্রাম্যমাণ বাজার বসানোর ব্যবস্থা করা হলে বিক্রিতে স্বস্তি আসতো। তারা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম শুধু বাংলাদেশের বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ জনপ্রিয়। যে কারণে প্রতি মৌসুমে দেশের গন্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরার আম। যা জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
(ঢাকা টাইমস/০৫মে/এসএ)

মন্তব্য করুন