বায়োগ্যাস প্লান্ট ব্যবহারে গ্রামীণ গৃহবধূদের কষ্ট লাঘব

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ
  প্রকাশিত : ২০ মার্চ ২০২১, ১৮:০৭| আপডেট : ২০ মার্চ ২০২১, ১৮:০৮
অ- অ+

একসময় কাঠ, শুকনো পাতা, গোবর শুকিয়ে রান্নার কাজ করতেন গ্রামের গৃহবধূরা। তবে, বর্তমানে অনেক গ্রামেই পৌঁছে গেছে বায়োগ্যাস প্লান্টের সুবিধা। ফলে, গৃহবধূরা পাচ্ছে কিছুটা স্বস্তি। স্বল্প খরচে বায়োগ্যাস প্রকল্প প্রস্তুত প্রণালীর মাধ্যমে মিটছে কিশোরগঞ্জের গৃহস্থালীর রান্না এবং বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে এ জেলার গ্রামীণ জীবনমান অনেকটাই বদলে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের মেসার্স আরেফিন পোল্ট্রি ফার্মের সত্বাধিকারী নুরুল আরেফিন লিংকন, মাজহারুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম রতন, মাইজপাড়ার কামরুল ইসলাম, আ. আউয়াল, মুক্তার হোসেন, মঞ্জিল মিয়া, আবুল কাশেমের বাড়িতে পরিবেশসম্মত বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে তা রান্না ও বিদুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছেন।

মেসার্স আরেফিন পোল্ট্রি ফার্মের সত্বাধিকারী নুরুল আরেফিন লিংকন বলেন, ‘আমার ফার্মটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। পরবর্তীতে পরিবেশের ছাড়পত্র আনতে গিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্টের জন্য বলা হলে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করি। ফার্মের গরু ও মুরগির বিষ্টা দিয়ে এ গ্যাস উৎপাদন করে রান্না-বান্না করা হয়। আমার বায়োগ্যাস প্লান্ট দেখে এলাকার আরও দশটি বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি হয়েছে।

বায়োগ্যাস গ্রামীণ জনশক্তি কিশোরগঞ্জ অফিসের ইঞ্জিনিয়ার বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় দুই হাজার পরিবার বায়োগ্যাস ব্যবহার করছেন। আমার সময়েই এক হাজার বায়োগ্যাস স্থাপন করেছি। অল্প খরচে পরিবেশসম্মত বায়োগ্যাস প্লান্ট পদ্ধতি সাড়া জাগিয়েছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু সাঈদ বলেন, ‘বায়োগ্যাস প্লান্ট পদ্ধতি পরিবেশ সম্মত। আমাদের অফিস থেকে পরিবেশের ছাড়পত্র প্রদানকালে পোল্ট্রি শিল্পের মালিকদের শর্ত দিয়ে থাকি বায়োগ্যাস প্লান্ট ছাড়া খামার প্রতিষ্ঠা না করার। যাদের বায়োগ্যাস রয়েছে তাদেরই ছাড়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। বায়োগ্যাসের বর্জ্য জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’

সব প্রাণীর মল থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। পশুর গোবর, মুরগির বিষ্টাসহ অন্যান্য পচনশীল পদার্থ বাতাসের অনুপস্থিতিতে পঁচানোর ফলে যে গ্যাস তৈরি হয় তাই হচ্ছে বায়োগ্যাস।

অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কোনো জৈব পদার্থকে পচানো হলে সেখান হতে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে অ্যানারবিক ডাইজেশন বলে। যার মাধ্যমে কিছু অণুজীব জৈব পদার্থকে ভেঙে মূলত মিথেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। যেকোনো পচনশীল বস্তু বায়োগ্যাস তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন- মলমূত্র (মানুষ, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগী ইত্যাদি), তরি-তরকারি, ফলমূল ও মাছ-মাংসের ফেলনা অংশ, লতাপাতা, বিভিন্ন আবর্জনা ও কচুরিপানা। বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য প্রধানত দুধরণের প্লান্ট ব্যবহৃত হয়। এগুলো হল-ফিক্সড ডোম বায়োগ্যাস প্লান্ট ও ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্লান্ট। এছাড়াও আরও কয়েক ধরনের বায়োগ্যাস প্লান্ট রয়েছে।

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বায়োগ্যাসের অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। অল্প জায়গায় এই প্লান্ট তৈরি করা যায়। এই প্লান্ট অনেকদিন টিকে থাকে এবং কাজ করে। আবর্জনা ও দুর্গন্ধমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে ওঠে। উপাদানগুলো পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায় না, মশা-মাছি জন্মায় না। রাঁধুনীর শারীরিক ধকল কমে। জমির জন্য উন্নতমানের সার পাওয়া যায়। গ্রামের জীবনযাত্রায় আধুনিকতা আসে। বায়োগ্যাসের বর্জ্য জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

গবেষকরা বলছেন, ৭-৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জন্য ৫-৬টি মাঝারি আকারের গরুর দৈনন্দিন গোবর থেকে ১০৫ ঘনফুট গ্রাস উৎপাদন সম্ভব যা দিয়ে তিন বেলার রান্না-বান্নাসহ একটি ম্যান্টেল বাতি জ্বালানো যাবে।

তারা জানান, প্রতি কেজি গোবর থেকে ১.৩ ঘনফুট গ্যাস হিসাবে বছরে ১০৯ ঘনমিটার গ্যস পাওয়া সম্ভব। যা ১০৬ টন কেরোসিন বা কয়লার সমান। এ ছাড়াও হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির মলমূত্র থেকে এবং আবর্জনা, কচুরিপানা বা জলজ উদ্ভিদ থেকেও উলে¬খযোগ্য পরিমাণ বায়োগ্যাস পাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, গ্যাসহিসাবে ব্যবহারের পর ঐ গোবর জমির জন্য উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তার মৃত্যু
ঈদের দিনে স্বল্প সময়ে অধিক আয় কসাইদের
বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের পাঁচ জামাত
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন সেনাপ্রধান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা