দিনাজপুরে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে গোর-এ-শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত 

দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদ-উল-আজহার জামাত অনুতি হয়েছে দিনাজপুরে। দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে এ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে অংশ নেয় লাখো মুসল্লি। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে দিনাজপুরে এ ঈদের জামাত পরিণত হয় মুসল্লিদের মিলন মেলায়। দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় এ জামাতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

শনিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান। দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের এ জামাতে অংশ নেয় লাখো মুসল্লি। এ ঈদের জামাত পরিণত হয় মুসল্লিদের মিলন মেলায় । সকাল সাড়ে ৮ টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, জয়পুরহাটসহ আশপাশের অনেক জেলা মুসল্লিরা অংশ নেয় এ জামাতে।

এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ এ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেতে আনন্দে আপ্লুত হয় মুসল্লিরা।

রাজধানী ঢাকা থেকে আগত ষাটর্বেধাবয়সের কাছাকাছি মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এত বড় জামাতে এক সাথে নামাজ আদায় এই প্রথম। জানি না আর কখনো এই সুযোগ হবে কি না। এই সর্ববৃহৎ ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।

দিনাজপুর পুলিশ সুপারে মা. মারুফাত হুসাইন বলেন, ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বড় এই ঈদ জামাতে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঈদগাহ মাঠজুড়ে ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ শুরু করেন। মাঠের চত্বরদিকে তৈরি ১৫টি প্রবেশ পথে মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মাঠে ছিল ৫টি ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ ও র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। মাইক বসানো ছিলো শতাধিক। ছিলো স্বাস্থ্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা। তৈরি করা হয় অসংখ্য অজুখানা এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও মেডিকেল ক্যাম্প।

এই ঈদের নামাজ পড়ান ও মোনাজাত করান মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, ইমামকে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন মসজিদ এবং মাদ্রাসা থেকে নিয়োজিত ছিল পাঁচ শতাধিক মুক্কাবির। কয়েক দিন ভারি বর্ষণ গেলেও আল্লাহর রহমতে আজ আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। মুসল্লিরা স্বস্তি পেয়েছেন, নামাজ আদায়ে। দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে এ ঈদের নামাজে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদের এই জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো.রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘দৃষ্টি নন্দন এই ঈদগাহ মিনার এ রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব, ৪৭ ফুট উচ্চতা ইমাম দাঁড়ানোর স্থান। এর পাশাপাশি রয়েছে ৫১টি গম্বুজ। এছাড়াও ৫১৬ ফুট দৈর্ঘেও ৩২টি আর্চ নিমার্ণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। এবার প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছে। আগামীতে এই ঈদ গাহ মাঠে মুসল্লিদের জন্য নামাজ আদায়ের পরিধি আরো বাড়ানো হবে। উপরে সামিআনা ঠানানো হবে।

প্রসঙ্গত ২২ একর জায়গা বিস্তৃত এ ঈদগাহ মিনারে ৫১৬ ফুট দীর্ঘ সর্বোচ্চ ৬০ ফুট উচ্চতার দু'টি গম্বুজসহ ৫২টি গম্বুজ রয়েছে। মিনারের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এর মাঝে আরও ২০ ফুট উচ্চতার ৫২টি গম্বুজ নিয়ে ৫১৬ ফুট প্রস্থের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানের ঈদগাহ মিনারটি এখন ঐতিহাসিক মিনারে পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যতদম বৃহৎ এ ঈদগাহ মাঠে ঈদেও এই জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। আগামীতে এ ঈদগাহ ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হবে এমন প্রত্যাশা সকলের।

(ঢাকা টাইমস/০৭জুন/এসএ)