ঈদের দিনে স্বল্প সময়ে অধিক আয় কসাইদের

ঈদে চাহিদা বেড়েছে কসাইদের। নিয়মিত কাজ করেন এমন কসাইয়ের পাশাপাশি মৌসুমী বা ছুটা কসাইয়েরও চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় একদিনের জন্য কসাই বনে যান তারা।
ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই অনেক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালক নিজেদের কাজ ছেড়ে বিভিন্ন পশুর হাটে এসে বেপারীদের সঙ্গে এবং যারা কোরবানির পশু কিনছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি করছেন কসাইয়ের কাজের জন্য। গরুর দাম এর ওপর তাদের শ্রমের মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে পেশাদার কসাইয়ের চেয়ে মৌসুমি কসাইয়ের মজুরি কিছুটা কম।
মৌসুমি কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তারা এ কাজে নিযুক্ত পেশায় থাকেন না। তখন তাদের কেউ রিকশা চালায়, সবজি বিক্রি করে কিংবা ভ্যান চালায়, নতুবা দিনমজুর, নিরাপত্তারক্ষী, নৈশপ্রহরী, হকারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঈদের এই ছুটিতে তাদের কাজ না থাকায় ও কসাইয়ের কাজ করে বাড়তি টাকার আশায় তারা হয়ে গেছেন মৌসুমী কসাই। দর দাম করে তারা চুক্তি করছেন কসাইদের সঙ্গে। জবাই ও মাংস কাটাকুটি থেকে শুরু করে বণ্টনের চুক্তিতে তারা কাজ দিচ্ছেন।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই চাহিদা বাড়ে কসাইদের। কোরবানির পশু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো, এমনকি মাংস কাটাকাটির পুরোটাই সিদ্ধ হস্তে করেন এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা।
স্বল্প সময়ে আয়ও হয় বেশি। তাইতো পবিত্র ঈদুল আজহার সময় পেশাদার কসাইয়ের পাশাপাশি মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করেন অনেকে।
টঙ্গী, সিলমুন, আউচপাড়া, মরকুন, মাজুখান, পূবাইল,হারবাইদ এলাকাগুলোতে ঘুরে বিভিন্ন কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি পশু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করতে অন্তত ৩ থেকে ৫ জন কসাইয়ের একটি দলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোরবানির ঈদের সময় ব্যাপক পরিমাণ পশু কোরবানি হওয়ায় শুধু পেশাদার কসাই দিয়ে এই চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না।
তাই এই সময় বিভিন্ন পেশার পাশাপাশি মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি গড়ে প্রত্যেকে তিন থেকে চার কেজি করে মাংস পান। অনেকে আবার কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট অংশ (মাথা, লেজ, পায়ের হাড়, জিহ্বা, ভুঁড়ি) কসাইদের দিয়ে দেন। ফলে কোরবানির ঈদে স্বল্প সময়ে অন্যান্য পেশার তুলনায় অধিক লাভ হয় মৌসুমি কসাইদের।
পূবাইল এলাকায় কোরবানির গরু প্রক্রিয়াজাত করছিলেন মৌসুমি কসাইদের একটি দল। সেখানে কথা হয় জামালপুরের বাসিন্দা মো. আল আমিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। শুধু কোরবানির ঈদের সময় মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে কোরবানির ঈদ এলে কসাইয়ের কাজ করি। এই কাজ করতে ভালো যেমন লাগে তেমনি ভালো আয়ও হয়। তাই প্রতি বছর এই সময় আমরা দল বেধে এই কাজ করি। এছাড়া আমাদের সামর্থ্য না থাকায় কোরবানি দিতে পারি না। কিন্তু কসাইয়ের কাজ করলে কোরবানির মাংস পাওয়া যায়। এতে পরিবারের লোকজন অন্তত কোরবানির মাংস খেতে পারে। আমরা ১৬ জনের একটি দল ঈদের দিন কসাইয়ের কাজ করছি। একেকজনের গড়ে ৬-৭ হাজার টাকা করে আয় হয়েছে। সঙ্গে কোরবানির মাংস পেয়েছি ৩-৪ কেজি করে।
একই দলে মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করছিলেন বাদল। পেশায় তিনি একজন গাড়িচালক।
তিনি বলেন, ঈদের সময় ঢাকায় মানুষজন থাকে না। লেগুনা চালিয়ে তেমন আয়ও হয় না। তাই কসাইয়ের কাজ করি। এতে কাজও করা হয়, আয়ও ভালো হয়। এছাড়া কোরবানির মাংসও পাওয়া যায়।
কুদাব এলাকার বাসিন্দা জহিরুল আলম লিটন।
তিনি জানান, আমরা কয়েকজন মিলে একটা মহিষ কিনেছি, আমরা তো আর কসাইয়ের মত কাজ করতে পারি না। এজন্য তিনজন কসাই নিয়োগ দিলাম, পারিশ্রমিক বাবদ তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হলো।(ঢাকা টাইমস/০৭জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন