গ্রীষ্মের চিঠি

গ্রীষ্ম আসে—
ধুলোর স্তব্ধতায়, পায়ের নিচে নরম ঝঞ্ঝার মতো,
জমে থাকা ক্লান্ত সূর্যের ঘামে ভিজে যায় রাস্তাঘাট।
রোদ ঝরানো বিকেলে—
জলের ওপর ভেসে ওঠে এক লেখা চিঠি,
মেঘের খামে মোড়ানো কিছু গোপন ইচ্ছা
পাখির মতো উড়ে এসে নামে জানালার ধারে।
.
তপ্ত বাতাসে ভেসে আসে হারিয়ে যাওয়া কোনো গান,
যেখানে ঘাসের শীর্ষে আমরা বুনে রাখি স্বপ্ন,
একটা করে— প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি দৃষ্টিতে।
পৃথিবী তখন গভীর জলের নিচে হাঁসফাঁস করা প্রেমিক,
চাঁদ তার বুকের মধ্যিখানে ফিক করে জ্বলে ওঠে,
আলো ছড়ায় না— শুধু অনুভব হয়ে বাজে হৃদয়ের পর্দায়।
.
দুপুরের মাঝখানে
গাছের ছায়া হয়ে ওঠে অভিমানী বন্ধু,
যে জানে— কার কাঁধে হাত রাখলে ব্যথা কমে,
কার চোখে চোখ রাখলে স্মৃতি ফিরে আসে নীরবে।
সংকোচ মুছে ছোট্ট জানালা খুললে
গ্রীষ্ম ঢুকে পড়ে গল্প হয়ে—
কখনো কবিতা, কখনো পুরনো কোনো চিঠির ভাঁজ।
.
আমরা বুঝি না জলের ভাষা পুরোপুরি,
তবু এক ফোঁটা ঘামের ভেতরেও
পাই বৃষ্টির অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি,
কৃষ্ণচূড়ার ডালে রয়ে যাওয়া লাল রঙের আর্তি।
পৃথিবী হয়ে ওঠে যেন জলে লেখা কবিতা—
চোখে পড়লে মুছে যায়, মনে রাখলে থেকে যায়।
.
এভাবেই সময় চলে যায় গত হয়ে
ধূলির স্তরে স্তরে স্মৃতি রেখে,
গ্রীষ্ম রেখে যায় এক দগ্ধ ভালোবাসা—
যা কাঁদায় না, বরং নীরবে বলে যায়—
“আমি ছিলাম, আমি আছি, আবার আসব
একদিন বিকেলের সোনালি চিঠি হয়ে,
তোমার বারান্দায় পড়ে থাকব অপেক্ষার মতো।”

মন্তব্য করুন