প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পাঠকের উদ্দেশ্যে লেখকের বার্তা

প্রিয় পাঠক,
এই চিঠিটি শুধু একটি উপন্যাস শেষ হওয়ার উপলক্ষে লেখা নয়—
এটি এক অন্তরঙ্গ হৃদয়ের বাণী, যা আমি লিখছি আপনারই জন্য।
আপনি—যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত “প্রথম প্রেমের স্পর্শ”-এর প্রতিটি শব্দ পড়েছেন, কিছুটা হলেও হৃদয়ে ধারণ করেছেন,
আপনি—যার চোখে তমালের কান্না জমেছে,
আপনি—যার মনে নীলার নীরবতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে,
আপনি—যার বুকের গভীরে ‘আলো’র স্পর্শে এক ভোরের আশ্বাস জন্ম নিয়েছে।
এই উপন্যাসে আমি কোনো জয়ের গল্প বলিনি।
বলিনি ভালোবাসা সব বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত মিলনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়।
বরং আমি বলেছি—ভালোবাসা কীভাবে প্রতীক্ষার আঙিনায় দাঁড়িয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে,
বলেছি—ভালোবাসা কীভাবে হারিয়েও মুছে যায় না,
বরং স্মৃতির পাতায়, হৃদয়ের গোপন প্রার্থনায়,
একটি চিঠির খামে, অথবা একটি শিশুর চোখে বেঁচে থাকে।
আপনি যদি কখনো গভীর রাতে নিঃশব্দে কেঁদে ফেলেন
শুধু কারো বলা ‘ভালো থেকো’ শুনে—
তবে আপনি জানেন তমাল কে।
আপনি যদি দিনের পর দিন নিজের ভালোবাসা চাপা দিয়ে
কারও জন্য পথ দেখিয়ে যান—
তবে আপনি জানেন নীলা কেমন হয়।
তমাল-নীলা শুধু চরিত্র নয়,
তারা আমাদের ভেতরের এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা—
যা প্রকাশ পায় না কখনও কথায়,
কিন্তু জীবনের একেকটি মুহূর্তে ভেসে ওঠে শ্বাসের ভিতর।
এই গল্প শুরু হয়েছিল এক রঙিন বিকেলে—
তাদের প্রথম দেখা, প্রথম হাসি, প্রথম হাত ছোঁয়া।
কিন্তু সময় কেবল আলো বোনে না,
তাতে থাকে অন্ধকার, অব্যক্ত কথামালা, স্মৃতির গহীনে হারিয়ে যাওয়া।
একসময় তারা হারায়—
তবে সেই হারিয়ে যাওয়ার ভেতরেও থাকে ফিরে আসার স্বপ্ন,
একটি না-পাওয়া চিঠি,
একটি রেখে যাওয়া কবিতা,
একটি সন্তান—
যার চোখে প্রতিফলিত হয় তাদের অর্পিত ভালোবাসার চিরন্তন শিখা।
আমি জানি, আপনি যখন তমালের ব্রিফকেসের ভেতর থাকা
নীলার হাতে লেখা চিঠি পড়েছেন,
আপনি থেমে গিয়েছিলেন।
আপনি যখন দেখেছেন, এক চুপি চুপি প্রেম কীভাবে সামাজিক নিয়মে বাঁধা পড়ে,
আপনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।
কারণ আপনি জানেন—এ গল্প আপনারও।
আপনি হয়তো নীলা বা তমালের মতো—
আপনার মধ্যে পূর্বপুরুষের কিছু না বলা ভালোবাসা,
অব্যক্ত কান্না,
আর একটি অসমাপ্ত গল্প রয়ে গেছে।
“প্রথম প্রেমের স্পর্শ” লেখা আমার জন্য এক আত্মভ্রমণের মতো ছিল। ছিল সীমাহীন কষ্টেরও।
এই যাত্রায় প্রতিটি চরিত্র আমার আত্মাকে খুঁড়ে তুলেছে।
আমি কেঁদেছি, থেমেছি, আবার কলম ধরেছি—
কারণ আমি জানি, কোনো না কোনো পাঠক একদিন ঠিক আমার মতোই অনুভব করবেন।
এই উপন্যাসে সময়ের ফেরে কিছু চরিত্র হারিয়েছে মাত্র ,
কেউ মরেনি, তবুও হারিয়ে গেছে সময়ের জটিল বাঁকে।
কেউ আবার বেঁচে থেকেও আজও অপেক্ষা করেন—
এক চিঠির, এক হাতের স্পর্শের, এক ভালোবাসার পুনর্জন্মের।
আমি চেয়েছি এই গল্পে প্রেম শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার সীমাবদ্ধ গল্প না হয়ে,
একটি উত্তরাধিকার হয়ে থাকুক।
একটি নীরব আত্মা হয়ে বেঁচে থাকুক—
আলোদের চোখে, কথা-চিন্তায়, এমনকি বিদ্রোহে।
এখানে যারা হেরেছেন,
তারা শিখিয়েছেন—প্রেম মানে কেবল একসাথে থাকা নয়,
প্রেম মানে প্রতিদিন হারিয়েও ভালোবাসতে পারা।
হয়তো আপনি এখন জানেন,
ভালোবাসা সব সময় মুগ্ধতা নয়—
ভালোবাসা অনেক সময় একজোড়া চোখের জল,
একটি অপূর্ণ স্বপ্ন, একটি না বলা কথা,
যা গেঁথে থাকে বুকের গোপন খাতায়।
এই ১৪টি পর্ব লেখার প্রতিটি শব্দের পেছনে
আপনার মত পাঠকদের চাহনি ছিল,
আপনার প্রতিক্রিয়া, ভালোবাসা,
আর কোনো কোনো চুপচাপ নীরবতা—
যা আমাকে বলেছে, আমি একা নই।
আমি জানি না, আপনার জীবনে কেউ আছে কিনা
যার জন্য আপনি তমালের মতো রাতের পর রাত ঘুমাতে পারেন না,
আমি জানি না, আপনি কখনো কাউকে নীলার মতো নিজের ভালোবাসা চেপে যেতে দিয়েছেন কিনা,
কিংবা আপনি কারও জন্য আলো হয়ে জন্মেছেন কিনা।
কিন্তু আমি জানি,
আপনিও হৃদয়বান মানুষ।
আপনার ভালোবাসা আছে,
আপনি অপেক্ষা করতে পারেন,
আপনি প্রেমে বিশ্বাস করেন—
যদিও তা শেষ না হয়েও চিরন্তন থাকে।
এই উপন্যাসের শেষ মানে হয়তো সবার জন্য এক নয়।
তবে যদি আপনার হৃদয়ে এই গল্প একটি স্মৃতি হয়ে থেকে যায়, তবে আমার লেখা সার্থক।
আপনার হৃদয়ে যদি কখনও একটি কদমফুলের সুবাস ভেসে আসে,
একটি পুরনো বইয়ের ভাঁজে রাখা চিঠি চোখে পড়ে,
একটি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আপনি কাউকে খুঁজে ফেরেন—
তবে জানবেন, “প্রথম প্রেমের স্পর্শ” আপনার মধ্যেও বেঁচে আছে।
ভালোবাসা হারিয়ে যেতে পারে,
কিন্তু তার স্পর্শ থেকে যায়—
একটি নামহীন কবিতায়,
একটি শিশুর হাসিতে,
একটি হৃদয়বিদারক নীরবতায়।
আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব—
আপনার মতো একজন পাঠক পেয়েছি বলে।
ভালো থাকেন, ভালোবাসেন, সাহস রেখেন—
আর মনে রেখেন,
প্রথম প্রেম সবসময় জয়ী না হলেও,
তার ছোঁয়া কখনো মুছে যায় না।
ভালোবাসা নিয়েই থাকেন,
ভালোবাসা নিয়েই বাঁচেন!
—এম এম মাহবুব হাসান
(লেখক - ‘প্রথম প্রেমের স্পর্শ’)

মন্তব্য করুন