সংসদের উচ্চকক্ষ হবে কি না সংশয়, সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে

বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল সংসদের নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল চায় ভোটের অনুপাতে (পিআর) বণ্টন হবে উচ্চকক্ষের আসন। সদস্য নির্বাচনের এই দ্বিমতের কারণে সংসদের উচ্চকক্ষ প্রস্তাব বাদ যেতে পারে।
উচ্চকক্ষ নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে দলগুলো। আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে উচ্চকক্ষ হবে কি না, কিংবা কীভাবে গঠিত হবে।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যাতে ভবিষ্যতে কেউ বাদ দিতে না পারে, সে জন্য সংবিধানের বিশেষ কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান যুক্ত করতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৪তম সংলাপে উচ্চকক্ষ এবং সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং গণভোট লাগবে। উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হবে ধরে এ প্রস্তাব করেছিল কমিশন।
গতকাল সকালের আলোচনায় উচ্চকক্ষের গঠন নিয়ে পঞ্চম দিনের মতো আলোচনা হয়। বিএনপির ৩১ দফায় উচ্চকক্ষ গঠনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
উচ্চকক্ষ নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, একটি দল বা তিনটি দল না চাইলে উচ্চকক্ষের আলাপ আটকে যাওয়াটা হবে অবিচার, বৈষম্য হবে। অধিকাংশ দল পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষের পক্ষে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপি এবং এর মিত্ররা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে। এখন প্রস্তাবটিই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল এবং জোটের সিপিবি ও বাসদ ছাড়া বাকিরা উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে ছিল। এলডিপি উচ্চকক্ষের ৫০ আসন নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে এবং ৫০ আসন ভোটের অনুপাতে বণ্টনের প্রস্তাব করে। আলোচনায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও আপাতত উচ্চকক্ষ চায় না।
ঐকমত্য না থাকায় উচ্চকক্ষের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনকে দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। নিজেদের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে আশা করছে কমিশন।
বিএনপির সালাহউদ্দিন বলেন, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে না ভোটের অনুপাতে– এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। সাধারণ বিল কীভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে– এসব প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য হয়নি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন আছে কি না, সেই প্রশ্ন অনেক দল তুলেছে।
জামায়াত চায় পিআর পদ্ধতিতে উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে। জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেন, পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ হতে হবে। যেখানে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। শুধু বড় দল নয়, ছোট দলগুলোর কণ্ঠ উচ্চকক্ষে থাকবে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত না হলে অথবা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তবে অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (অনুচ্ছেদ ৫৮ক, ৫৮খ এবং ৫৮ঙ) সংশোধনে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
বিএনপি প্রস্তাব করেছে, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে গণভোটের মাধ্যমেই করতে হবে, যাতে কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হাত না দিতে পারে।
সংবিধান সংশোধনে জামায়াতের অবস্থান সম্পর্কে তাহের বলেন, নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ এবং উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধান সংশোধনে গণভোট লাগবে।
(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন