মাইলস্টোনের আকাশে খসে পড়া তারাগুলো

এম এম মাহবুব হাসান
  প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৯:২৫
অ- অ+

একটা সকাল ছিল

ঘুমভাঙা বৃষ্টির শব্দে কাঁপা—

আকাশ যেন টুপটাপ শিশুর চোখের মতো ভিজছিল।

রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া পানির রেখা পেরিয়ে

তারা উঠেছিল স্কুলবাসে,

যেখানে ছেলেমানুষি খিলখিল,

চোখে রোদ্দুরের মেঘের ছায়া,

কাঁধে স্বপ্ন, হাতে খাতা,

বুকে আগামীর বাংলাদেশ।

তারা জানালার ধারে বসে দেখেছিল—

একটা গাড়ির পেছনে লুকিয়ে থাকা আরেকটা গাড়ি,

যেমন করে স্বপ্ন পিছু নেয় একটানা।

তাদের মাথায় তখন ছিল

গণিতের নির্দয় প্রশ্ন,

আর বইয়ের পাতায় অঙ্কুরিত ভবিষ্যতের ঘ্রাণ।

না, তাদের কোনো যুদ্ধ ছিল না,

ছিল না মিছিলে হাঁটার প্রহর কিংবা বেকুব নেতার ভাষণ।

তারা শুধু শিখছিল—

কীভাবে পৃথিবীকে ভালোবাসতে হয়

পেনসিলের আঁকাবাঁকা রেখায়।

তারা স্বপ্ন দেখছিল

এই শহরের গণ্ডি পেরিয়ে

একটি মুক্ত গ্রহে,

যেখানে মানুষ পাখির মতো স্বাধীন,

ভয়হীন।

কিন্তু হঠাৎই—

আকাশ যেন বিক্ষিপ্ত রুদ্রতার নীল পর্দা ছিঁড়ে

নেমে এলো আগুনের বজ্রনিনাদ।

একটি প্রশিক্ষণ বিমান,

যা হয়তো আকাশ চেনার উদ্দেশ্যে উঠেছিল,

নেমে এলো

ঠিক সেই শিশুদের শান্ত দুপুরের বুক চিরে।

কেউ জানল না,

তাদের হাতে তখন ছিল একটা অসমাপ্ত আঁকাবাঁকা রেখা।

একটি অসমাপ্ত শ্রেণিকক্ষের পাশে

মাটির নিচে ঘুমিয়ে পড়ল

জুতা, ব্যাগ, কলম,

আর অসংখ্য ফেলে যাওয়া নাম।

সকালের স্কুলবাস থেকে নেমে

আর এলো না ফিরে—

কোথায় হারাল তারা?

তারা কি এখন

হেঁটে বেড়ায় মেঘের গায়ে?

নাকি ঈশ্বরের কোনো অদৃশ্য শ্রেণিকক্ষে

আবার নতুন করে শিখছে

ভালোবাসা ও প্রতিজ্ঞার পাঠ?

সোমবার থেকে

আমরা যারা বেঁচে আছি,

তারা খাচ্ছি পাথর হয়ে যাওয়া খবরের শিরোনাম।

নড়বড়ে ভবিষ্যতের গায়ে জমছে ছাই।

প্রতিদিন এমন করে

এক অদৃশ্য কফিনে

রেখে আসি নীরব কান্নার হাজারো কণ্ঠস্বর।

হে সময়,

তুমি কি জানো—

শিশুরা কবিতা বোঝে?

তারা বোঝে ভালোবাসার আগে নিরপরাধ মৃত্যুর ভাষা।

তারা বোঝে খেলনার চোখে লুকানো বিষণ্ণতা,

তারা বোঝে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর অঙ্ক,

যেখানে ভুল করলে

ফিরে আসা যায় না।

আমরা আর কাঁদি না,

আমরা শুধুই শোক পালন করি

একটি দীর্ঘ নীরবতায়।

তারা ছিল আমাদের আগামীর ভোরের নাম,

ছিল প্রতিটি শ্রুতিমধুর উচ্চারণ,

ছিল একটি উজ্জ্বল বাংলাদেশের অসমাপ্ত চিত্রপট।

আজ আমরা শুধু বলি—

ওরা, যারা মাইলস্টোনে খসে পড়া তারাগুলো,

আকাশেই জ্বলে থাকুক চিরকাল

শুকতারা হয়ে।

কিন্তু এই মৃত্যু,

এই ছিন্ন রং, এই অকাল বিলাপ—

এড়ানো কি যেত না?

কে বলে প্রশিক্ষণ বিমান চালাতে হবে

এই জনসমুদ্রের পাশ ঘেঁষে?

যেখানে সহস্র অপ্রস্ফুট কলি

নাই হয়ে গেল অকস্মাৎ ঘুমের ফাঁদে!

কে বইবে এই শোকের ভার? কে গাইবে এই করুণ আর্তনাদ?

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাবার সামনেই ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল প্রান্তর, ফেরা হলো না বাসায়
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা
‘যারা বড় চাকরি পেতে চান, তাদের বিএ পাস করার আগে বিয়ে করা উচিত নয়’
নরসিংদীতে চাঁদা না দেওয়ায় প্রতিবন্ধী অটোচালককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা