গোমতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবন, ‘ত্রাণ লাগবে না আমাদের বাঁচান’

জাহিদ হাসান নাইম, কুমিল্লা
  প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১৬:০৭
অ- অ+

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের প্রবল স্রোতে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বহু গ্রাম। হঠাৎ বাড়িঘর ডুবে আটকা পড়েছে লাখো মানুষ। ‘ত্রাণ লাগবে না, আমাদের বাঁচান’- এমন আকুতি জানাচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোমতী নদীর উত্তর পশ্চিম পাশে বুরবুড়িয়া নামের বাঁধের প্রায় ২০০ ফুট ভেঙে গেলে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ইতিমধ্যে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ।

বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধে ও আশ্রয়কেন্দ্রে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পানির প্রবল ঢেউয়ের এক পর্যায়ে বুরবুড়িয়া বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ফাটল বন্ধ করতে গিয়ে দেখে সেখানে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি বের হচ্ছে। পানির স্রোতের সঙ্গে গর্তের আকার বড় হতে থাকে এবং একপর‌্যায়ে সেখান দিয়ে প্রবল গতিতে পানি ঢুকতে থাকে লোকালয়ে। প্লাবিত হয় আশপাশের জনবসতি।

সরেজমিনে বুরবুড়িয়া বাঁধ এলাকায় দেখা যায়, লোকালয় তলিয়ে গেছে পানিতে। প্রবল স্রোতে বেড়িবাঁধের গাছগুলো একের পর একে উপড়ে গিয়ে স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। কেউ কেউ আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশু নিয়ে অবস্থান করছেন বেড়িবাঁধে। নির্ঘুম রাত কাটানো অবসন্ন মানুষগুলো অপলক তাকিয়ে আছেন তাদের তলিয়ে যাওয়া বসতভিটার দিকে।

বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। স্পিড বোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিথিলাপুর এলাকার দুটি আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো পড়েছেন আরেক ভোগান্তিতে। জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এদিকে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুমিল্লা মহানগরের বাসিন্দারা।

বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ইতিমধ্যে প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুরবুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর, বেড়াজাল, শ্যামপুর, গোবিন্দপুরসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম।

জীবনঝুঁকির আশঙ্কা করে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। তাদের আর্তি- ‘আমাদের ত্রাণ লাগবে না। আমাদের জীবন বাঁচান। অনেক মানুষ বাড়িতে আটকা পড়ে আছে ।‘

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আকতার বলেন, ‘বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুরবুড়িয়া বাঁধ ভেঙে লোকালয়ের ভেতরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল প্রবাহের সাথে বাঁধ ভাঙার আকার বাড়ছে। অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘বুরবুড়িয়া এলাকায় গোমতীর বাঁধে ধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। আমরা গত কয়েক দিন ধরেই স্থানীয় মানুষজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসছি। আমাদের টিম কাজ করছে।’

বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় গোমতী নদীতে পানির উচ্চতা কমছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।

এদিকে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আর তেমন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অনুকূলে আসায় পানির চাপও কমবে বলে জানায় তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টাইগারদের চ্যালেঞ্জিং স্কোর, হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে বোলিংয়ে তাকিয়ে
এবার নিরবের নায়িকা ইধিকা পাল, প্রকাশ্যে প্রথম কাজ
পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
তারেক রহমান গণতন্ত্রকে ঢেলে সাজিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে তুলে ধরবেন: কামাল জামান মোল্লা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা