‘ধর্মীয় পুলিশিং’য়ের নামে সৈকতে দুই নারীকে মারধর-হেনস্তা, যুবক আটক
ধর্মীয় পুলিশিংয়ের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে মারধর ও হেনস্তা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়ানোর পর সমালোচনার মুখে ওই ঘটনায় জড়িত এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার নাম মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩)।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। ঘটনায় জড়িত যুবকটিকে শনাক্ত করার পর সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে।’
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ফারুকুল পরিবারের সঙ্গে ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা এলাকায় থাকলেও তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।
গত বুধবার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছিলেন ফারুকুল।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোর একটিতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।
এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক।
ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।
আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে দেখা যায়।
সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে তরুণীকে উঠবস করানো সেই যুবক।
এসময় ওই তরুণী যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, “উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।”
এসব ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সচেতন মানুষ ধর্মীয় পুলিশিংয়ের নামে এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান। এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেইসবুকে তিনটি ভিডিও দিয়ে লেখেন, “কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোনো নারীকে একা পেলে, কারো পোশাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।”
ফেইসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে আটক করা হয়।
এদিকে ঘটনার সময় ওই যুবক নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করায় অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা বলছেন, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নয়।
স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ জানান, আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন।
তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি স্বউদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো কাজ করে থাকে সেটার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্মের জবাবদিহি ব্যক্তিকেই করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/ইএস)