চাঁদপুরে মাটি কাটায় কমছে আবাদি জমি, কমছে উর্বরতা ও উৎপাদন

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৮| আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৮
অ- অ+

নদীবেষ্টিত জেলা চাঁদপুরের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি ও মৎস্য আহরণ। কিন্তু অবৈধভাবে ভরাট ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় কমে যাচ্ছে কৃষিজমি ও খালবিল। পাকা ভবন নির্মাণে ইটের চাহিদার জোগান দিতে ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির ওপর অংশের উর্বর মাটি। এতে জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে খাদ্য উৎপাদন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় ৯৮ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে কম-বেশি ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। আবার ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। এর মধ্যে অর্ধশত ইটভাটা অবৈধ বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বৈধ ও অবৈধ সব ইটভাটাতেই ইট তৈরির জন্য কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির মাটির ওপরের স্তর।

সরেজমিন জেলার ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিগত সময়ে অনুর্বর ও অনাবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার হলেও এখন গোপনে-প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। এসব উপজেলায় মাটি কাটার কাজে জড়িয়ে পড়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা ভাটা মালিকদের যোগসাজশে ফসলি জমির ওপরি অংশের উর্বর মাটি উজাড় করছে।

শাহরাস্তি উপজেলার চিকুটিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ফসলি মাঠের সেচ ম্যানেজার মো. আকবর জানান, তাদের মাঠের কিছু জমি উঁচু-নিচু আছে। এ কারণে গত দুই বছর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। জমির ওপরি অংশের মাটি কাটা অবৈধ জেনে কেন কাটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাটা মালিকদের সাথে চুক্তি এবং এই কাজে বিনিয়োগ হওয়ার কারণে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে আর কাটবেন না বলে জানান তিনি।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মানিকরাজ এলাকার মেসার্স মানিক রাজ ব্রিক্সের পরিচালক মিরন খান বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে লাগানোর বৈধতা নেই জানি। কিন্তু ইট তৈরির জন্য মাটি পাব কোথায়। বাধ্য হয়ে কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে।’

এসব এলাকার কৃষকরা বলছেন, অবাধে কৃষিজমির মাটি কাটায় জমির উর্বরতা যেমন হারাচ্ছে, তেমনি খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে। মাটি ইটভাটায় নিতে পরিবহনের জন্য রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আরো কৃষিজমি। একই সাথে অনেকে এসব জমির মাটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাছ থেকে কিনে জমি ভরাট করে বসতবাড়ি বানাচ্ছে।

এদিকে সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার গ্রামের হাজী সাহেবের বাড়ির সামনে ওই বাড়ির হাবিবুর রহমান ও তার ছোট ভাই মিলন প্রায় ১০ একর জমির মাটি কেটে তৈরি করছেন দিঘি। এসব মাটি দিঘির চারপাশের বাঁধ এবং অন্যান্য জমি ভরাট করে বসতির জন্য তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে পাশের জমিতে মাটি রেখে ওই মালিকদের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। ওই সব জমির মালিকদের মধ্যে আনোয়ার উল্যাহ, আবিদ আলি ও মো. শাহজালাল ইতোমধ্যে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে মাদ্রাসা হবে এবং মসজিদ পরিচালনার জন্য এই দিঘি কাটা হচ্ছে। আমরা মনে করি কারো ফসলের ক্ষতি হবে না। তবে আমাদের জমির শ্রেণি যেহেতু নাল, এটি দিঘি করার আগে প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ছিল।’

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে এটি পূর্বের অবস্থায় এবং উৎপাদনযোগ্য হতে সময় লাগে প্রায় ১৫-২০ বছর। কিন্তু আগের মতো উর্বরতা থাকে না। কৃষিজমি রক্ষায় আমাদের মাটি কাটার আইন বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘কৃষিজমির ওপরি অংশের মাটি কাটা হচ্ছে এমন তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রশাসনিক নানা কাজের মধ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-ইমরান খান বলেন, জমি ভরাট করা যাবে আবার প্রয়োজনে পুকুর কিংবা দিঘিও করা যাবে। তবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিসি) কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত হবে এবং এই ধরনের শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য একাধিকবার তদন্ত করারও প্রয়োজন হয়। ওই শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়টি জনহিতকর কাজের জন্য কি না সেটি দেখা হয়।’

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/মোআ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির
‘তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ইতিবাচক বার্তা হতে পারে’
আজ থেকে সচিবালয় ও যমুনার আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
সরকারের বেঁধে দেয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চামড়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা