ভাঙন থেকে সরে আসতে হবে, ৩২ নম্বর নিয়ে কেন এ পোস্ট উপদেষ্টা মাহফুজের?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িটির আশপাশে থাকা বাকি স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বুধবার রাতে বাড়িটি ভাঙার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও শেখ পরিবার এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ‘ভাঙার প্রকল্প’ থেকে সরে আসতে বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বুধবার রাত ২টা ২৪ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘গড়ার তাকত আছে আমাদের?’- শিরোনামে এক পোস্টে মাহফুজ আলম এ কথা বলেন।
পোস্টে মাহফুজ আলম লেখেন, “আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ মোকাবেলা করছি। নিছক কিছু মূর্তি বা দালান নয়। মূর্তি ( idols) না ভেঙে আমাদের উচিত আমাদের শত্রুদের শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা (Ideals), শক্তি ও হেজেমনি গড়ে তোলা। ভাঙার প্রকল্প থেকে সরে এসে দিনকে দিন আমাদের গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “লীগ বা হাসিনা সে অর্থে কিছুই না, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের এক্সটেনশন। আর আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ তার হেজেমনি তৈরি করছে বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রকল্পনা, দেশে এবং ডায়াসপোরায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে। আমাদের পালটা হেজেমনিও এ তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।”
মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, “ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন।”
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন শীঘ্রই শুরু হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন ও জুলাই গণহত্যার বিচারের কাজ চলমান। এ মাসেই এ কাজগুলো আরও গতি পাবে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ নিছক ভাঙা নয়, বরং বিকল্প গড়ারও লড়াই। নূতন বন্দোবস্তে আমরা ভাঙার চেয়ে গড়ার দিকে গুরুত্ব দিতে চাই।”
পুনশ্চ: খুনী হাসিনার বক্তব্য প্রচার এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী থাকবে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ। এজন্যই আমাদের উচিত, সৃজনশীল শক্তির বিকাশ ঘটানো এবং সার্বিকভাবে এ আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পদ্ধতি নেওয়া। কারণ, এ লড়াই মাত্র শুরু হল। অন্তত, এক দশক পরে এ লড়াইয়ের একটা মীমাংসা হয়তো হবে। অথচ, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি সামান্যই।– বলেন মাহফুজ আলম।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা- নেতিবাচক এনার্জি, কিন্তু অভ্যুত্থানের পর আমাদের এ সকল এনার্জিকে ইতিবাচক রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। এখনো সে সুযোগ হারিয়ে যায়নি। আগামী অন্তত এক দশকব্যাপী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য আমাদের সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগানো দরকার।”
ভবিষ্যতের দিকে তাকানো আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “ইতিহাস আমাদের সুযোগ দিয়েছে। আমাদের এবার জিততেই হবে আর জেতার উপায় একটাই- রাষ্ট্রকল্প, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ ও মর্যাদাবান মানবসম্পদ গড়ে তোলা।”
“আল্লাহ আমাদের ফেরাসত তথা দূরদৃষ্টি দিক”-বলেন মাহফুজ।
(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এফএ)

মন্তব্য করুন