জাফর ইকবালের বই প্রসঙ্গে যা বললেন তসলিমা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একদল গোষ্ঠী লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নিয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন। বরাবরই স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত তসলিমা ১৯৯৪ সালে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ভারতে বসবাস শুরু করেন। বিভিন্ন সময়েই জঙ্গি, ব্লগার হত্যাসহ আলোচিত সাম্প্রতিক ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তার মতামত জানান।
২২ ফেব্রুয়ারি তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পোস্ট থেকে তার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো-
‘ফেসবুক জুড়ে দেখছি লোকেরা চেচাচ্ছে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নাকি তসলিমার মতো দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করবে তারা। কেন? কী দোষ তাঁর? তাঁর দোষ, তাঁর নতুন বইয়ের নাম 'ভূতের বাচ্চা সোলায়মান'। সোলায়মান তাদের ইসলামের নবী। সুতরাং নবীকে ভূতের বাচ্চা বলা তারা বরদাস্ত করবে না। আমার জানতে ইচ্ছে করছে বইটি কি নবী সোলায়মানকে নিয়ে লেখা মুহম্মদ জাফর ইকবালের কোনও ইসলামী ইতিহাস ? নাকি ভূতের বাচ্চা সোলায়মানকে নিয়ে লেখা এটি তাঁর একটি গল্প? ইসলামের ইতিহাস লিখলে খতিয়ে দেখার দরকার আছে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে কি না, আর ফিকশান লিখলে কিন্তু কিছুই খতিয়ে দেখার দরকার নেই।
বইয়ের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে বইটি ভূতের গল্পের বই, বানানো বই, কিসসা। যে বইয়ের সঙ্গে নবী-কাহিনীর কোনও যোগ নেই। সোলায়মান নামে পৃথিবীতে প্রচুর লোক আছেন। সব সোলায়মানের চরিত্র নবী সোলায়মানের মতো পবিত্র নয়। সব সোলায়মানই নবী নন। নবী সোলায়মান একজনই। বিক্ষোভকারীরা কি কোনও মানুষের নাম সোলায়মান রাখা হলে বিক্ষোভ দেখান, বলেন নবীর নামে নাম রেখেছিস কেন? কত কোটি মুহম্মদ নামের ছেলে বিশ্বময়। কিন্তু নবী মুহম্মদ একজনই। নবীর নামের সঙ্গে কোনও মানুষের নাম মিলে যাওয়া মানে তো কোনও মানুষের নবী হয়ে যাওয়া নয়। এ কথা একটা শিশুও বুঝতে পারে। শুধু পারে না আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক শিশুরা।
ওদের বুকে আল্লাহ রসুল আছেন, ওদের মাথায় কোরান হাদিস, ওদের হাতে মানুষ খুনের চাপাতি। ওরা জ্ঞানী গুণী, নমস্য। ওদের কাছে ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে, তবেই না আমাদের বই লেখার, গান গাওয়ার, ছবি বানানোর, কার্টুন আঁকার স্বাধীনতা পাবো আমরা।’
উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনায় লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নাম অগ্রগণ্য।
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/জেএস)
মন্তব্য করুন